আমরা এতদিন জেনে এসেছি, মহাবিশ্বের শুরুটা হয়েছিল ‘বিগ ব্যাং’ নামে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে। সেই বিশেষ মুহূর্তেই স্থান, কাল, শক্তি ও পদার্থের সূচনা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই গল্পটি হয়তো সম্পূর্ণ নয়। হতে পারে, আমাদের এই মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছে কোনো এক বিশাল ব্ল্যাকহোলের গভীরে, আর সেই ব্ল্যাকহোলটি ছিল আরেকটি মহাবিশ্বের অংশ।
এই ধারণা একেবারে নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ একে নতুন গুরুত্ব দিচ্ছে। ক্যানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক লিওর শামির ও তাঁর সহকর্মীদের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বহু দূরের গ্যালাক্সিগুলোর ঘূর্ণনে একরকম মিল রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, অধিকাংশ গ্যালাক্সি ঘড়ির কাটার দিকে অর্থাৎ ডানদিকে ঘুরছে। এটা নিছক কাকতালীয় নয়, বরং ইঙ্গিত দিতে পারে এক ধরনের মৌলিক কসমিক ঘূর্ণনের, যার উৎস হতে পারে কোনো ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোল।
পোলিশ-আমেরিকান তাত্ত্বিক পদার্থবিদ নিকোডেম পপ্লাভস্কি বহু বছর ধরে এই ধারণা নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর মতে, প্রতিটি ব্ল্যাকহোলই হতে পারে একটি নতুন মহাবিশ্বের জন্মস্থান। যখন কোনো নক্ষত্র ধ্বংস হয়ে ব্ল্যাকহোলে রূপ নেয়, তখন সেখানকার স্থান-কাল চরমভাবে দুমড়ে-মুচড়ে বাউন্স করে এক নতুন কসমসের জন্ম দিতে পারে। পপ্লাভস্কির ভাষায়, এটি হচ্ছে "বাউন্সিং কসমোলজি", যেখানে এক মহাবিশ্ব শেষ হলে, অন্য একটি মহাবিশ্বে তার গর্ভে জন্ম নেয়।
এই মডেল অনুযায়ী, আমাদের মহাবিশ্ব হতে পারে অন্য কোন এক মহাবিশ্বের ব্ল্যাকহোলের ভিতরকার কাঠামো। ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজন একধরনের "সময়সীমান্ত" তৈরি করে, যার সাথে বাইরে অতীতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই ধারণাটি, সময়ের একমুখী প্রবাহ বা এ্যারো অফ টাইমেরও ব্যাখ্যা দিতে পারে, যদিও এটা এখনো গভীর গবেষণার বিষয়।
যদি এই মডেল সত্য হয়, তাহলে বিগ ব্যাং তত্ত্বকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। হয়তো বিগ ব্যাং ছিল কোনো এক বৃহত্তর মহাবিশ্বের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া একটি মহাজাগতিক ঘটনা। এমন ধারণা মহাবিশ্বকে আর একক সত্ত্বা হিসেবে দেখে না, বরং অগণিত ব্ল্যাকহোল থেকে জন্ম নেওয়া অসংখ্য কসমসের সম্ভাবনার কথা বলে।
তবে এই ধারণা এখনো তাত্ত্বিক পর্যায়েই রয়েছে। বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাপকাঠিতে একে যাচাই করতে হবে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো প্রযুক্তি হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। আমাদের মহাবিশ্ব কি সত্যিই এক বিশাল বিস্ফোরণের ফল, না কি অন্য এক অজানা মহাবিশ্বের গর্ভজাত সন্তান?
বাস্তবিকই, বিজ্ঞান যত এগোচ্ছে, ততই নতুন নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই আমাদের শেখাবে, মহাবিশ্বকে একেবারে নতুন চোখে কিভাবে দেখতে হয়।
তথ্যসূত্র: স্পেস ডট কম
Comments