ডার্ক ম্যাটারের রহস্যের খোঁজে

ডার্ক ম্যাটার বা অদৃশ্য পদার্থ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বহুদিনের। আমরা যে মহাবিশ্বে বাস করছি, সেটির গঠন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দৃশ্যমান পদার্থ—অর্থাৎ নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, নীহারিকা, গ্রহ, উপগ্রহ এসব মিলিয়ে পুরো মহাবিশ্বের মাত্র পাঁচ শতাংশের ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। বাকি অংশের মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ হলো ডার্ক এনার্জি, আর প্রায় ২৭ শতাংশ জুড়ে আছে এক রহস্যময় উপাদান, যার নাম ডার্ক ম্যাটার। মহাবিশ্বের যেসব কণা বা বস্তু পদার্থ হিসেবে কাজ করে, সেই মোট পদার্থের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই হচ্ছে এই ডার্ক ম্যাটার। এদের আমরা দেখতে পাই না, কারণ এরা আলো শোষণ বা বিকিরণ করে না।  কিন্তু এদের মহাকর্ষীয় টান স্পষ্ট বোঝা যায়।

সম্প্রতি ডার্টমাউথ কলেজের গবেষকরা একটি নতুন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছেন, যেটা ডার্ক ম্যাটারের উৎপত্তি সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আমূল বদলে দিতে পারে। তাঁদের মতে, মহাবিশ্বের শুরুর দিকে, বিগ ব্যাংয়ের পরপরই, উচ্চ-শক্তির, ভরহীন কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষের ফলে তারা জোড় বেঁধে যায় এবং দ্রুত তাদের শক্তি হারিয়ে ভারী কণায় রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি অনেকটা বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানিতে পরিণত হওয়ার মতো। গবেষকরা বলছেন, এই রূপান্তরই ডার্ক ম্যাটারের জন্ম দিয়েছে।
এই তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি পরীক্ষণযোগ্য।

গবেষকদের মতে, এই রূপান্তরের ফলে মহাবিশ্বের প্রাথমিক বিকিরণ, অর্থাৎ কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডে (CMB) একটি নির্দিষ্ট সিগন্যাল বা চিহ্ন থাকার কথা। বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পর্যবেক্ষণ ডেটা ব্যবহার করে এই সিগন্যাল খুঁজে পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

এই নতুন তত্ত্ব ডার্ক ম্যাটার নিয়ে বিজ্ঞানীদের পূর্ববর্তী ধারণাগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ডার্ক ম্যাটার শুরু থেকেই ভারী এবং ধীরগতির ছিল। কিন্তু এই গবেষণা বলছে, এটি শুরুতে ছিল প্রায় আলোর মতো দ্রুতগতির এবং ভরহীন। পরবর্তীতে এটি ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে ভারী কণায় পরিণত হয়েছে।
গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, এই রূপান্তরের জন্য একটি নির্দিষ্ট কণার অস্তিত্ব প্রয়োজন, যেটা এই প্রক্রিয়াটি শুরু করেছিল। তাঁরা বলেন, ইলেকট্রনের মতো সাবঅ্যাটমিক পার্টিকেলও এধরনের রূপান্তর ঘটাতে পারে।

এই তত্ত্ব যদি প্রমাণিত হয়, তবে এটি ডার্ক ম্যাটার নিয়ে আমাদের জানার ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটাবে এবং মহাবিশ্বের গঠন ও বিকাশ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। এই গবেষণাটি গত ১৪ মে, ২০২৫,   "Physical Review Letters" জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
https://journals.aps.org/prl/abstract/10.1103/PhysRevLett.134.191004

ডার্ক ম্যাটার নিয়ে এই নতুন তত্ত্ব  মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। ভবিষ্যতের গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ এই তত্ত্বের সত্যতা যাচাই করতে সহায়তা করবে।

তথ্যসূত্র: phys.org

Comments