রকেট উৎক্ষেপণ অস্ট্রেলিয়ার জন্য নতুন কোন ঘটনা নয়। ১৯৬৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে মহাকাশে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। তবে এতদিন পর্যন্ত এসব উৎক্ষেপণ ছিল সম্পূর্ণ বিদেশি উদ্যোগে। এসব রকেট অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব প্রযুক্তি ছিল না। অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার মহাকাশ অভিযানে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছে। কুইন্সল্যান্ডের বাওয়েন শহরের পাশে এক খামারে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। এর নাম 'বাওয়েন অরবিটাল স্পেসপোর্ট'। এখান থেকেই যেকোনো সময় মহাকাশে পাড়ি দিতে পারে ‘ইরিস টেস্টফ্লাইট-১’। সম্পূর্ণভাবে অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি এই রকেট যদি সফলভাবে কক্ষপথে পৌঁছাতে পারে, তাহলে অস্ট্রেলিয়া হয়ে উঠবে বিশ্বের ১২তম দেশ, যারা নিজেদের তৈরি রকেট দিয়ে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে সক্ষম।
এই অনন্য উদ্যোগের পেছনে রয়েছে ‘গিলমোর স্পেস টেকনোলজিস’ নামের এক স্টার্টআপ কোম্পানি। দুই ভাই, অ্যাডাম এবং জেমস গিলমোর, ২০১৫ সালে এই কোম্পানিটি গড়ে তোলেন একটাই লক্ষ্য নিয়ে, সেটা হলো, অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে মহাকাশে নিজেদের রকেট পাঠানো। প্রায় এক দশকের কঠোর পরিশ্রমে তাঁরা নির্মাণ করেছেন ২৫ মিটার লম্বা ইরিস রকেট, যার ওজন ৩০,০০০ কেজির মতো।
রকেটটি তিনটি ধাপে বিভক্ত এবং এতে ব্যবহৃত হয়েছে গিলমোর স্পেসের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হাইব্রিড ইঞ্জিন। এতে কঠিন জ্বালানি ও তরল অক্সিডাইজারের মিশ্রণ রয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রকেটটি ঘণ্টায় প্রায় ২৭,৫০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে।
তবে এই রকেট উৎক্ষেপণ শুধুই প্রযুক্তির নয়, সাংস্কৃতিক অর্থেও গুরুত্বপূর্ণ। রকেটটির সঙ্গে মহাকাশে পাঠানো হবে একটি জার ভর্তি ‘ভেজিমাইট’। এটা অস্ট্রেলিয়ার সবচাইতে পরিচিত খাবার এবং জাতীয় গর্বের প্রতীক। মহাকাশে দেশের নিজস্ব কিছু নিয়ে যাওয়ার এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে অনেক অস্ট্রেলিয়ানের জন্য গর্বের বিষয় হবে।
রকেট উৎক্ষেপণের দিন নিরাপত্তার জন্য আশেপাশের আকাশ ও সমুদ্রপথ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে। তবে বাওয়েনের কোরাল বিচ, গ্রেস বিচ এবং লায়ন্স পার্ক থেকে সাধারণ মানুষ রকেট যাত্রা দেখতে পারবেন। যদিও সরাসরি সম্প্রচার করা হবে না, পরে ভিডিও প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে গিলমোর স্পেস।
এই উৎক্ষেপণ সফল হলে, অস্ট্রেলিয়ার মহাকাশ খাতে উন্মোচিত হবে এক নতুন দিগন্ত। গিলমোর স্পেস ভবিষ্যতে আরও বড় রকেট বানানোর পরিকল্পনা করেছে, যেগুলো ১,০০০ কেজি পর্যন্ত স্যাটেলাইট বহন করতে পারবে। এমন উদ্যোগ অস্ট্রেলিয়াকে মহাকাশ প্রযুক্তিতে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও স্বনির্ভর করে তুলবে।
গিলমোর স্পেসের এই যাত্রা কেবল একটি রকেটের উড্ডয়ন নয়, বরং একটি জাতির জন্য স্বপ্নের মহাকাশে ডানা মেলা। এই উদ্যোগ প্রমাণ করে অদম্য ইচ্ছা আর উদ্ভাবনী শক্তি থাকলে, মহাকাশে পৌঁছানো অসম্ভব নয়।
তথ্যসূত্র: এবিসি নিউজ।
ছবি কৃতজ্ঞতা: গিলমোর স্পেস টেকনোলজিস।
Comments