বাংলাদেশের উদ্ভিদবিজ্ঞান ও বায়োটেকনোলজির প্রাজ্ঞ শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও পথিকৃৎ অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলাম আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল একশো বছরের কিছু বেশি। তাঁর প্রয়াণে বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চা, উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণাক্ষেত্র একজন নিবেদিত প্রাণ মানুষকে হারালো।
অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলামের জন্ম ১৯২৪ সালের ৬ আগস্ট, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মেদিনীপুর জেলায়। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে, যেখানে তিনি উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। উচ্চতর গবেষণার জন্য তিনি যুক্ত ছিলেন কর্নেল, ক্যালিফোর্নিয়া, নটিংহাম ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে। এই আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা তিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও শিক্ষা উন্নয়নে কাজে লাগান।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একজন সম্মানিত অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্র ছিল সাইটোজেনেটিক্স ও প্লান্ট টিস্যু কালচার। তিনি শুধু ক্লাসরুমেই শিক্ষকতা করেননি—বাংলাদেশে আধুনিক উদ্ভিদবিজ্ঞান গবেষণার এক শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত হয় প্লান্ট টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব প্লান্ট টিস্যু কালচার অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, যা পরবর্তীতে দেশে কৃষিভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি গবেষণার ভিত্তি গড়ে দেয়।
পাটের দেশি ও তোষা জাতের সংকরায়ণ নিয়ে তাঁর গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
শুধু একজন বিজ্ঞানী বা শিক্ষক নন, অধ্যাপক ইসলাম ছিলেন নৈতিকতা, বিনয় ও মেধার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। তাঁর ছাত্ররা আজ ছড়িয়ে আছেন দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে, এবং প্রত্যেকেই গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন এক মহান শিক্ষকের কথা, যিনি শুধু জ্ঞান দিতেন না—জীবনের পথেরও সন্ধান দিতেন।
অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলাম আমাদের মাঝে আজ না থাকলেও, তাঁর অবদান, আদর্শ ও রেখে যাওয়া গবেষণাধারা বাংলাদেশের বিজ্ঞান চিন্তা ও চর্চার মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকবে। এই মহান মানুষটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
Comments