গ্রহাণুর মতিগতি

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে, 2024 YR4 নামে একটি গ্রহাণু আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে এই গ্রহাণুটির মতিগতি বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ এর গতিপথ অনুযায়ী, গ্রহাণুটি ২০৩২ সালের ২২ ডিসেম্বর পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে। যদিও সেই সম্ভাবনা মাত্র ২%। বিজ্ঞানীরা
 গ্রহাণুটির গতিপথ বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এটি যদি কোনভাবে পৃথিবীতে আঘাত হানে, তবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। 

গ্রহাণুটির ব্যাস ৪০ থেকে ৯০ মিটারের মধ্যে হতে পারে। যদিও এটি কোনো শহরকে পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট বড় নয়, তবে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানোর মত সক্ষমতা রাখে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, যদি এটি পৃথিবীতে আঘাত হানে, তবে প্রায় ৭.৭ মেগাটন TNT বিস্ফোরণের সমান শক্তি নির্গত হবে, যা একটি বিরাট এলাকা জুড়ে ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে। অতীতে টুঙ্গুস্কা (১৯০৮) এবং চেলিয়াবিনস্ক (২০১৩) অঞ্চলে গ্রহাণুর আঘাতে যা ঘটেছিল, এটি তারচেয়েও বেশি ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে, NASA এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গ্রহাণুটির গতিপথ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কিছুদিন পর মহাকাশে স্থাপিত জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে এই গ্রহাণুর নজরদারিতে ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে। মোদ্দা কথা হলো, বিজ্ঞানীরা এর কক্ষপথ আরও নির্ভুলভাবে গণনা করার চেষ্টা করছেন, যাতে নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় এটি সত্যি সত্যিই পৃথিবীর দিকে চলে আসবে কিনা।

এর পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এটি সংঘর্ষের ঝুঁকিতে থাকে, তবে এর গতিপথ পরিবর্তন করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। যেমন, "কিনেটিক ইমপ্যাক্টর" নামের প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রহাণুটিকে ধাক্কা দিয়ে তার কক্ষপথ পরিবর্তন করা হতে পারে, অথবা জরুরি পরিস্থিতিতে পারমাণবিক বিস্ফোরণের মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।

যদিও এখন পর্যন্ত, এই গ্রহাণুর আঘাতের সম্ভাবনা কম (২%), তবুও বিজ্ঞানীরা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। এই ধরনের ঘটনা আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য আরও প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। গ্রহাণুর মতো মহাজাগতিক বস্তু থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই আপাতত দুশ্চিন্তার কিছু নেই, তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক দৃষ্টিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, যাতে প্রয়োজনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AP)

Comments