"ডুমসডে ক্লক" একটি প্রতিকী ঘড়ি। এর মাধ্যমে মানব সভ্যতা ধ্বংস হওয়া থেকে কতটুকু দূরে আছে তার একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এটি মানবজাতির বৈশ্বিক বিপদের কাছাকাছি অবস্থানের একটি শক্তিশালী রূপক। এই ঘড়ির প্রবর্তক ও পরিচালক হলো, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের মুখপত্র,
বুলেটিন অফ দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস। এই বুলেটিনের প্রচ্ছদে, "ডুমসডে ক্লক" প্রকাশিত হয় এবং প্রতিবছরই এটা আপডেট করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯৪৭ সালে প্রবর্তিত এই ঘড়িটির "মিডনাইট" বা মধ্যরাতের দিকে অগ্রসর হওয়াকে মানব সভ্যতার ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রথমে এটি পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি নিয়ে তৈরি হলেও, বর্তমানে এটি জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সাইবার যুদ্ধ, জৈব প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিপদকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে, বুলেটিনের সায়েন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি বোর্ড নোবেল বিজয়ীসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়, ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের দিকে এগোবে নাকি দূরে সরে যাবে। এই সিদ্ধান্তে বৈশ্বিক নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়। ঘড়ির কাঁটার অবস্থান নির্ণয় করতে রাজনৈতিক উত্তেজনা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাগুলি বিবেচনায় নেওয়া হয়। ডুমসডে ক্লকের গুরুত্ব হলো, এর মাধ্যমে বৈশ্বিক পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা জনিত সমস্যাগুলোর প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করা।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ষাটের দশকে কোল্ড ওয়ারের সময় এটি মধ্যরাতের দুই মিনিটের মধ্যে ছিল, যা মানুষকে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পরমাণু অস্ত্রের প্রসার, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরাইলি হামলা, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জৈব প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে ঘড়িটি মধ্যরাতের আরও কাছে সরে এসেছে।
এই বছর, "ডুমসডে ক্লকে"র ঘড়ির কাঁটার অবস্থান মধ্যরাতের দিকে আরো এক সেকেন্ড সরে এসেছে। গতকাল এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিয়েছেন, 'ডুমসডে ক্লকে"র অবস্থান এখন মধ্যরাত থেকে মাত্র ৮৯ সেকেন্ডে দূরে। এই ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের এত কাছাকাছি আর কখনো আসেনি। এই ঘড়ি আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে, মানব সভ্যতার বারোটা বাজতে আর বেশি বাকি নেই। এটি মানবজাতির আসন্ন মহাবিপদের একটি অশনি সংকেত।
"ডুমসডে ক্লক" শুধু একটি বিপদের পরিমাপক নয়; এটি একটি কর্মসূচির আহ্বান। এটি সরকার, বিজ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষকে একত্রিত হয়ে বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এই ঘড়ি বিশ্বের জন্য যে সমস্যাগুলো জরুরি, সেগুলোতে মনোযোগ দিতে এবং সেগুলো সমাধানের জন্য নীতিমালা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতেও উদ্বুদ্ধ করে।
সংক্ষেপে বলা যায়, "ডুমসডে ক্লক" আমাদের সতর্ক করে এবং মনে করিয়ে দেয় এই গ্রহের ভবিষ্যৎ আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে যত দেরি হবে, ঘড়ির কাঁটা ততই এগিয়ে যাবে মধ্যরাতের দিকে।
Comments