ইউক্লিড টেলিস্কোপে 'আইনস্টাইন রিং'


এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেল, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) ইউক্লিড টেলিস্কোপ হঠাৎ করেই বিরল একটি 'আইনস্টাইন রিং'  খুঁজে পেয়েছে। এটি NGC 6505 গ্যালাক্সির চারপাশে দেখা গেছে। পৃথিবী থেকে এই গ্যালাক্সির দূরত্ব ৫৯০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। NGC 6505 গ্যালাক্সিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে। কিন্তু এর আগে এই গ্যালাক্সির চারপাশে আইনস্টাইন রিংয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। 

১৯১৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে বলেছিলেন, বস্তুর ভরের প্রভাবে এর চারপাশের স্থান-কালের বুননের মাঝে এক ধরনের বক্রতার সৃষ্টি হয়। যে বস্তুর ভর যত বেশি হবে তার চারপাশে স্থান-কালের বুননে বক্রতার পরিমাণও হবে তত বেশি।‌ এই বক্রতাকেই আমরা মহাকর্ষ বল হিসেবে দেখি।

পরবর্তীতে স্থান-কালের বক্রতার উপর ভিত্তি করে "গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং" নামে  জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করা হয়েছে। ম্যাগনিফাইং গ্লাসের লেন্সের মত গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সও ক্ষীণ আলোকরশ্মিকে বর্ধিত করে তোলে। এই আলোকরশ্মিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাদের পর্যবেক্ষণের কাজে লাগাচ্ছেন। মনে করুন, একটি বিশাল গ্যালাক্সির ঠিক পেছনে ছোট একটি দূরবর্তী গ্যালাক্সি রয়েছে। তখন ছোট গ্যালাক্সির ক্ষীণ আলোকরশ্মি সামনের বিশাল গ্যালাক্সির প্রবল মহাকর্ষ বলের প্রভাবে দুদিকে বেঁকে আমাদের চোখে দৃশ্যমান হবে। এভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরবর্তী অনেক ক্ষীণ গ্যালাক্সিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক সময় অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রাভিটেশনাল লেন্সিংয়ের ফলে দূরবর্তী গ্যালাক্সির আলো একটি সম্পূর্ণ রিংয়ের আকৃতিতে দৃশ্যমান হয়। আইনস্টাইনের সম্মানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন, "আইনস্টাইন রিং"। মহাবিশ্বে এরকম বেশ কিছু আইনস্টাইন রিংয়ের সন্ধান এর আগে পাওয়া গেছে। কিন্তু NGC 6505 এর মত একটি চেনা গ্যালাক্সির চারপাশে এই প্রথম আইনস্টাইন রিং দেখা গেল। 

ইউক্লিড টেলিস্কোপে তোলা একটি দূরবর্তী গ্যালাক্সির আলো থেকে তৈরি আইনস্টাইন রিংয়ের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এই নব আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিটি,  NGC 6505 গ্যালাক্সির ঠিক পিছনে, প্রায় ৪.৪২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই নতুন গ্যালাক্সির নাম এখনো ঠিক করা হয়নি। এই আবিষ্কারটি নিঃসন্দেহে মহাকাশে অবস্থিত ইউক্লিড টেলিস্কোপের সক্ষমতাকে প্রমাণ করে। ইউক্লিডের অত্যন্ত হাই রেজুলেশন ইমেজিং পদ্ধতির কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। পৃথিবী থেকে অতি উচ্চশক্তির টেলিস্কোপ দিয়েও এতদিন এটি দেখা সম্ভব হয়নি। 

আইনস্টাইন রিং মহাবিশ্বের গঠন এবং ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির মতো রহস্যময় বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করার জন্য মূল্যবান তথ্য দেয়। ইউক্লিড মিশন তার ছয় বছরের মেয়াদে মহাকাশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সার্ভে করে মানচিত্রায়ন করার লক্ষ্য নিয়েছে। আমরা আশা করতে পারি, অদূর ভবিষ্যতে ইউক্লিড টেলিস্কোপ এমন অনেক নতুন আবিষ্কার করবে যা আমাদের মহাবিশ্বকে চেনার পরিধি আরও বাড়িয়ে দেবে।

তথ্যসূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট।

Comments