আমাদের ব্ল্যাকহোল: স্যাজিটেরিয়াস এ স্টার

অন্যান্য গ্যালাক্সির মত আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রেও রয়েছে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। সূর্যের চেয়ে এই ব্ল্যাকহোলটির ভর ৪০ লক্ষ গুণ বেশি।  এর অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এই দানব আকৃতির ব্ল্যাকহোলটির নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন, "স্যাজিটেরিয়াস এ স্টার"।  এই সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলটি আবিষ্কার করার জন্য দু'জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ২০২০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এদের নাম, এন্ড্রিয়া গেজ এবং রেইনহার্ড গেনজেল। 

স্যাজিটেরিয়াস এ স্টার তার চারপাশের সমস্ত বস্তুকে গিলে খাচ্ছে।  এর ফলে ব্ল্যাকহোলটিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত প্লাজমার একটি পরিবৃদ্ধি চক্র (accretion disk) সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জানি, প্রবল মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ব্ল্যাকহোল থেকে কোন আলোক রশ্মি বের হতে পারে না। সেজন্য ব্ল্যাকহোল অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকে, একে দেখা যায় না। কিন্তু ব্ল্যাকহোলের চারপাশের পরিবৃদ্ধি চক্রে অবস্থিত বস্তুকণা, বিশেষত ইলেকট্রন, ব্ল্যাকহোলে বিলীন হবার আগে প্রবল মহাকর্ষের প্রভাবে অতি উজ্জ্বল বিকিরণের সৃষ্টি করে। এটি কিন্তু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয় না। তার কারণ হলো, ঘন হাইড্রোজেনের মেঘে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রটি ঢাকা পড়ে আছে। 

ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলাটি দুঃসাধ্য হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। এর জন্য রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। এখন থেকে কয়েক বছর আগে, M87 গ্যালাক্সির অভ্যন্তরের সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলটির ছবি বিজ্ঞানীরা তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই দুঃসাধ্য কাজটি তাঁরা করেছিলেন, সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা  আটটি ইভেন্ট হরাইজন রেডিও টেলিস্কোপে একই সময়ে পাওয়া বিপুল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে। এই পদ্ধতিকে বলে, ভেরি লং বেইজলাইন ইন্টার ফেরোমেট্রি,  সংক্ষেপে VLBI। 

এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে, বিজ্ঞানীরা  আমাদের নিজস্ব  ব্ল্যাকহোল স্যাজিটেরিয়াস এ স্টারের একটি ছবিও তুলতে সক্ষম হয়েছেন। গতবছর সেটি তাঁরা প্রকাশ করেছেন। VLBI পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলার পদ্ধতিটি বেশ জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। নিচের  ভিডিওতে এ সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আগ্রহী হলে ভিডিওটি দেখার জন্য অনুরোধ করছি। 

Comments