গতকাল ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর জন্মদিন। ১৫৬৪ সালের এই দিনে ইতালির পিসা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই শহরেই তিনি বড় হয়েছেন। পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন।
১৬১০ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও তাঁর নিজের তৈরি করা দূরবীন দিয়ে সর্বপ্রথম বৃহস্পতি গ্রহের চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ জোহানেস কেপলার প্রাচীন গ্রিক পুরাণ অনুসারে এই চারটি উপগ্রহের নামকরণ করেন, গ্যানিমেড, আইও, ইউরোপা এবং ক্যালিস্টো। পরবর্তীতে অবশ্য বৃহস্পতির আরো অনেক উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে।
নিকোলাস কোপার্নিকাসের মত, গ্যালিলিও বিশ্বাস করতেন সৌরজগতের সমস্ত গ্রহই সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে। এর স্বপক্ষে তিনি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনেক যুক্তি প্রমাণ খাড়া করেন। কিন্তু রোমান ক্যাথলিক চার্চ তাঁর কথায় ক্ষুব্ধ হলো। চার্চের মতে পৃথিবী হলো সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু। সূর্য সহ গ্রহ-নক্ষত্র সবকিছুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে। ধর্ম বিরোধী কথা বলার জন্য গ্যালিলিওর বিচার হলো। বিচারে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেন। মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচার জন্য তাকে বলতে হলো, তিনি যেটা বলেছেন সেটা ভুল, পৃথিবী হলো সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু পরবর্তীকালে রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ বলতে বাধ্য হয়েছেন, গ্যালিলিওই সঠিক ছিলেন। তবে এই সহজ সত্যটি স্বীকার করতে ভ্যাটিকানের সময় লেগেছে মাত্র ৩৫৯ বছর!
গ্যালিলিও ছিলেন আধুনিক বিজ্ঞানের জনক। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোন কিছু মানতে নারাজ ছিলেন। তখনকার মানুষের ধারণা ছিল উপর থেকে ছেড়ে দিলে ভারী বস্তু হালকা বস্তুর চেয়ে তাড়াতাড়ি মাটিতে পড়ে। গ্যালিলিওর এটা বিশ্বাস হলো না। তিনি ভাবলেন ব্যাপারটা পরীক্ষা করেই দেখা যাক। তিনি দুটো কামানের গোলা নিয়ে উঠে পড়লেন পিসার টাওয়ারের চূড়ায়। একটি কামানের গোলা বড়, অন্যটি ছোট। কামানের বড় গোলাটি ছিল ছোটটির চেয়ে বেশ ভারী।
টাওয়ারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি কামানের দুটো গোলাকে একই সাথে নিচে ফেলে দিলেন। দেখা গেল দুটো গোলাই একই সাথে মাটি স্পর্শ করলো। এর দ্বারা গ্যালিলিও প্রমাণ করলেন ভারী এবং হালকা বস্তুর পতনের গতিতে কোন তারতম্য হয় না। গ্যালিলিও অবশ্য মাধ্যাকর্ষণের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেননি। পরবর্তীতে এটা দিয়েছেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, যে বছর (১৬৪২) ইতালিতে গ্যালিলিওর মৃত্যু হয় সে বছরই ইংল্যান্ডে জন্ম নিয়েছিলেন আরেক মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন। আধুনিক বিজ্ঞানের জনক গ্যালিলিওর প্রতি জানাই প্রগাঢ় শ্রদ্ধা।
Comments