দুষ্টু ছেলে মেয়ে: এল নিনো ও লা নিনা

অস্ট্রেলিয়াতে এখন বসন্তকাল শেষ হয়ে আসছে। কদিন পরেই গ্রীষ্মকাল শুরু হবে। কিন্তু ক্যানবেরার সাম্প্রতিক আবহাওয়া দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। সারা নভেম্বর মাস জুড়েই বৃষ্টি ঝরছে। মাঝে মাঝে ঝমঝম করে পড়ছে। বৃষ্টি হলে দেশের কথা মনে পড়ে যায়। তখন ভালোই লাগে। তবে বেশি বৃষ্টি হলে ভালো লাগে না। 

সাধারণত নভেম্বর মাসে এদেশের আবহাওয়া এরকম থাকে না। নভেম্বর মাসে আকাশ থাকে পরিষ্কার। তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। কিন্তু এবারের আবহাওয়া ব্যতিক্রম।  সারাদিনে সূর্যের দেখা নেই।  তাপমাত্রা কম। রাতে হিটার ছাড়তে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়েই ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারা বলেছে, বর্তমানে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনার প্রভাবেই অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। 

লা নিনার কথা শুনে এল নিনোর কথাও মনে পড়ে গেল। এল নিনো ও লা নিনা হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে আবহাওয়া পরিবর্তনের দুটো ভিন্ন রূপ।  স্প্যানিশ ভাষায়, এল নিনো মানে হলো "ছোট্ট ছেলেটি" আর লা নিনা হলো "ছোট্ট মেয়েটি"। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা এই দুই দুষ্টু ছেলে মেয়ের আবির্ভাব হয়। আবহাওয়াকে এরা লন্ডভন্ড করে দেয়।‌ 

এল নিনো ও লা নিনা হলো একই  মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তনের ফলে এল নিনো ও লা নিনা এ দুটো বিপরীত ধর্মী ঘটনা ঘটে। সাধারণত দুই থেকে সাত বছর পরপর এ দুটো ঘটনা ঘটে।  তবে এর কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। বিজ্ঞানীরা একে বলেন, সাউদার্ন অসিলেশন ইন্ডেক্স। এল নিনো ও লা নিনা সাধারণত নয় মাস থেকে বারো মাস স্থায়ী থাকে। কিন্তু এর চেয়ে কম বেশিও হতে পারে। তারপর আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে আসে। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। 

এল নিনোর প্রভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের  দিক পরিবর্তন হয়ে আমেরিকা মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। তখন অস্ট্রেলিয়াতে বৃষ্টিপাত কমে যায়। ফলে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অনেক স্থানে খরা দেখা যায়। দক্ষিণ আমেরিকায়  বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়।  

কিন্তু কয়েক বছর পর লা নিনার প্রভাবে এর উল্টো ঘটনা ঘটে। তখন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত উল্টো দিকে অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। তখন অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। বর্তমানে সেটাই ঘটছে। জানিনা মেঘবতী দুষ্টু মেয়ে, লা নিনা কতদিন থাকবে এখানে।