কার্বন ডেটিং

যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার বয়স কত, আপনি সহজেই তার উত্তর দিতে পারবেন। কারণ নিজের জন্মসালটি নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে। কিন্তু মিশরের মমিকে যদি প্রশ্ন করা হয় তার বয়স কত? তাহলে সে কি  উত্তর দিবে? তারপর ধরুন, প্রাচীন জীবাষ্ম বা ফসিল, সেগুলো কত হাজার বছরের পুরনো, সেটাই বা কিভাবে জানা যাবে? এসব প্রশ্নকে মাথায় রেখেই বিজ্ঞানীরা একটি সহজ প্রাকৃতিক উপায় বের করেছেন। একে বলা হয় কার্বন ডেটিং পদ্ধতি। 

আমরা জানি সব জৈব পদার্থের মূল ভিত্তি হলো কার্বন পরমাণু। প্রতিটি প্রাণী এবং উদ্ভিদের মধ্যেই রয়েছে কার্বন। তবে এটি মূলত কার্বন- ১২ পরমাণু । এই পরমাণুর নিউক্লিয়াসে রয়েছে ৬টি প্রোটন এবং ৬ টি নিউট্রন। কার্বন- ১২ পরমাণু তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণ করে না। এটি হলো কার্বন পরমাণুর স্থায়ী রূপ। 

কিন্তু প্রকৃতিতে অতি সামান্য পরিমাণে অস্থায়ী কার্বন পরমাণুও রয়েছে। একে বলে কার্বন- ১৪। এই পরমাণুর নিউক্লিয়াসে রয়েছে ৬টি প্রোটন এবং ৮ টি নিউট্রন। এটি তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণ করে। 

বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে মহাজাগতিক রশ্মির আঘাতে নাইট্রোজেন ১৪ পরমাণু প্রাকৃতিক ভাবেই তেজস্ক্রিয় কার্বন ১৪ পরমাণুতে রূপান্তরিত হয় । কিন্তু প্রকৃতিতে এর পরিমাণ অতি সামান্য। 

সালোক সংশ্লেষণের সময় গাছপালা বায়ুমণ্ডল থেকে যে
কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে তার মধ্যে কার্বন ১২ এর পাশাপাশি অতি সামান্য পরিমাণে তেজস্ক্রিয় কার্বন ১৪ থাকে।  সেই কার্বন ১৪ উদ্ভিদ থেকে খাদ্যের মাধ্যমে  প্রাণী দেহে চলে আসে। 

কিন্তু আগেই বলেছি, তেজস্ক্রিয় কার্বন ১৪ পরমাণু স্থায়ী নয়। এটি আবার ধীরে ধীরে নাইট্রোজেন ১৪ পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়। প্রাণী এবং উদ্ভিদের মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে এর পরিমাণ কমতে থাকে। এর একটি সহজ হিসেব আছে। মোটামুটি ভাবে বলা যায়, প্রতি ৫৭৩০ বছরে কার্বন ১৪ এর পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়। তার মানে হলো প্রথম ৫৭৩০ বছর পর এর পরিমাণ হবে অর্ধেক। তার পরের ৫৭৩০ বছরে এর পরিমাণ হবে চার ভাগের এক ভাগ।  এর পরের ৫৭৩০ বছরে এর পরিমাণ হবে আট ভাগের এক ভাগ। এভাবে চলতেই থাকবে। বিজ্ঞানীরা একে বলেন হাফ-লাইফ। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই দীর্ঘ সময়ে স্থায়ী কার্বন -১২ পরমাণুর কোন পরিবর্তন হবে না। তার মানে হলো, কোন জীবাশ্মে কার্বন ১৪ এবং কার্বন ১২ এই দুই ধরনের পরমাণুর অনুপাত বছরের পর বছর ধরে কমতে থাকবে। সেটা হিসাব করে কোন জীবাশ্ম কত  হাজার বছরের পুরনো সেটা সহজেই বের করা যায়। এটাই হলো কার্বন ডেটিং পদ্ধতির মোদ্দাকথা। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ষাট হাজার বছরের পুরনো জীবাশ্মের বয়স  নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। ‌ তবে এর বেশি পুরনো হলে কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না। 

তথ্যসূত্র: সাইন্টিফিক আমেরিকান। 

Comments