ভ্যাকসিন রোগ সারাবার কোন ওষুধ নয়। ভ্যাকসিন হলো রোগ হবার আগেই তাকে প্রতিরোধ করার একটি কৌশল। ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝতে হলে আমাদেরকে প্রথমে মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানতে হবে। ইংরেজীতে একে বলে ইমিউন সিস্টেম। বাংলায় এর জুতসই কোন নাম খুঁজে পেলাম না, তাই একে ইমিউন সিস্টেমই বলবো।
মানুষের দেহকে আমরা যদি একটা দুর্গের সাথে কল্পনা করি তাহলে ইমিউন সিস্টেম হলো রোগ-জীবাণুর আক্রমণের বিরুদ্ধে সেই দুর্গের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। প্রতিনিয়তই আমরা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি রোগ-জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হচ্ছি। কিন্তু সংক্রামিত হলেই আমরা সাথে সাথে অসুস্থ হয়ে পড়ি না। কারণ রোগ-জীবাণু শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই আমাদের ইমিউন সিস্টেমের সৈন্য সামন্তরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুরু হয় জীবাণুর সাথে ইমিউন সিস্টেমের সম্মুখ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বেশিরভাগ সময়ই ইমিউন সিস্টেমেই জয়ী হয়। কিন্তু কোন কোন সময় জীবাণুরা ইমিউন সিস্টেমকে পরাভূত করে ফেলে। তখন আমাদের দেহে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সৈন্য সামন্তদের সাথে এবার পরিচিত হয়ে নেয়া যাক। আমরা জানি মানুষের রক্তে লোহিতকণিকার পাশাপাশি শ্বেতকণিকাও থাকে। শ্বেতকনিকাগুলো হলো ইমিউন সিস্টেমের সৈন্য সামন্তের ধারক এবং বাহক। এদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমে রয়েছে ম্যাক্রোফাজ (Macrophage) সেল। এইসব কোষের কাজ হলো জীবাণুকে গিলে খাওয়া। এটা হলো প্রতিরক্ষার ব্যবস্থার প্রথম লাইন অফ ডিফেন্স। কিন্তু ম্যাক্রোফাজ জীবাণুকে গিলে খেলেও, এটা শতভাগ কার্যকর ব্যবস্থা নয়। জীবাণুর ক্ষতিকারক অংশবিশেষ মানুষের শরীরে থেকে যায়। এদের বলে অ্যান্টিজেন। জীবাণু ভেদে অ্যান্টিজেনের আণবিক গঠন বিভিন্ন ধরনের হয়। এরা মূলত প্রোটিন অণু। তবে এর সাথে লিপিড বা পলিস্যাকারাইড অণু যুক্ত থাকতে পারে। অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দ্বিতীয় লাইন অফ ডিফেন্স তখন কার্যকর হয়। এই স্তরে রয়েছে বি লিম্ফোসাইট (B Lymphocyte) সেল। এসব কোষ থেকে বিশেষ এক ধরনের ইমিউনোগ্লোবিন প্রোটিন উৎপন্ন হয়, যাদেরকে বলা হয় অ্যান্টিবডি। স্পেসিফিক এইসব অ্যান্টিবডিগুলো অ্যান্টিজেনের সাথে সংযুক্ত হয়ে সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করে। মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সর্বশেষ স্তরে রয়েছে টি লিম্ফোসাইট (T Lymphocyte) সেল। এরা সরাসরি রোগাক্রান্ত কোষকে আক্রমণ করে রোগের বিস্তার রোধ করে। মজার ব্যাপার হলো, লিম্ফোসাইট সেলগুলো জীবাণুর সাথে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কিছু কিছু "মেমোরি সেল" তৈরি করে রাখে, যাতে ভবিষ্যতে অ্যান্টিজেনগুলোকে সহজেই শনাক্ত করা যায়। তার মানে হলো, একই জীবাণু যদি মানুষকে আবারো আক্রমণ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে লিম্ফোসাইটের অ্যান্টিবডি তৈরি করার কাজটা তখন সহজ হয়ে যায়। "অচেনা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার চাইতে চেনা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করা সহজ" এটাই হলো আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমের প্রধান রণকৌশল।
আর এই রণকৌশলের উপর ভিত্তি করেই ভ্যাকসিন নির্মাণ করা হয়। ভ্যাকসিন নির্মাণের পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছিলেন এডওয়ার্ড জেনার নামে একজন বিজ্ঞানী। ১৭৯৬ সালে তিনি সর্বপ্রথম গুটিবসন্ত বা স্মলপক্সের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। তিনি কাউপক্সের জীবাণু সংগ্রহ করে একটি বালকের দেহে প্রবেশ করিয়েছিলেন। কাউপক্স স্মলপক্সের মত মারাত্মক রোগ নয়। কিন্তু এর ফলে বালকটির দেহে পক্সের জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং স্মলপক্সের জন্য তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যায়। এভাবেই যুগে যুগে জীবাণুর দুর্বল, মৃত অথবা পরিবর্তিত রূপ ব্যবহার করে গুটি বসন্ত, যক্ষা, হুপিংকাফ, পোলিও, ইয়েলো ফিভার ইত্যাদি বিভিন্ন ভয়াবহ রোগের কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। বাংলায় যাকে আমরা বলি টিকা।
সম্প্রতি কোভিড ১৯ মহামারী রোধে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউট অফ ভ্যাকসিন রিসার্চের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন। এই ভ্যাকসিনের নাম হলো ChAdOx 1 n CoV -19। আর এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রখ্যাত ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ডক্টর সারাহ গিলবার্ট। এর আগে তিনি মারস এবং ইবোলার ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণায় সফলতা পেয়েছিলেন।
এই নুতন ভ্যাকসিনটি নির্মাণে তাঁরা শিম্পাঞ্জি থেকে পাওয়া এক বিশেষ ধরনের এডেনোভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই ভেক্টরকে তাঁরা এমনভাবে জেনেটিক্যালি মডিফাই করেছেন, যাতে এটি মানুষের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। তারপর এই ভেক্টরের মধ্যে তাঁরা করোনাভাইরাসের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনের তথ্য ঢুকিয়ে দিয়েছেন। স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন হলো মানুষকে ঘায়েল করার জন্য করোনা ভাইরাসের মূল অস্ত্র। এটি একটি অ্যান্টিজেন।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এই অ্যান্টিজেনটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে এর বিরুদ্ধে স্পেসিফিক অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। তারপর লিম্ফোসাইটের মেমোরি সেলের মাধ্যমে ইমিউন সিস্টেম করোনাভাইরাসের অ্যান্টিজেনটিকে চিহ্নিত করে রাখবে। ভবিষ্যতে যদি কখনো করোনাভাইরাস তাকে আক্রমণ করে তাহলে স্পেসিফিক অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া ইমিউন সিস্টেমের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে। মোদ্দা কথা হলো ভ্যাকসিন দিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে আগেভাগেই প্রস্তুত করে রাখলে "চিহ্নিত শত্রু" করোনাভাইরাসকে কাবু করা সহজ হবে।
অ্যানিম্যাল ট্রায়ালে এই ভ্যাকসিনটি যথেষ্ট কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এখন এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল চলছে। স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটি প্রবেশ করানোর পর স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখা হবে। সেই সাথে এই ভ্যাকসিনের কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সেটা লক্ষ্য করা হবে। স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে কোভিড ১৯ এর কোনো লক্ষণ আছে কিনা সেটাও ভালোভাবে পরীক্ষা করা হবে। তবে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, তাদের শরীরে সরাসরি করোনাভাইরাস প্রবেশ করানো হবে না। ভ্যাকসিন টেস্টিং এর নীতিমালা এটা কোনভাবেই অনুমোদন করে না।
সারা পৃথিবী এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য।
তাঁদের এই পরীক্ষার শতভাগ সাফল্য কামনা করছি।
তথ্যসূত্র: Center for Disease Control (CDC), USA.
Edward Jennar Institute for Vaccine Research, Oxford University, UK.
মানুষের দেহকে আমরা যদি একটা দুর্গের সাথে কল্পনা করি তাহলে ইমিউন সিস্টেম হলো রোগ-জীবাণুর আক্রমণের বিরুদ্ধে সেই দুর্গের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। প্রতিনিয়তই আমরা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি রোগ-জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হচ্ছি। কিন্তু সংক্রামিত হলেই আমরা সাথে সাথে অসুস্থ হয়ে পড়ি না। কারণ রোগ-জীবাণু শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই আমাদের ইমিউন সিস্টেমের সৈন্য সামন্তরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুরু হয় জীবাণুর সাথে ইমিউন সিস্টেমের সম্মুখ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বেশিরভাগ সময়ই ইমিউন সিস্টেমেই জয়ী হয়। কিন্তু কোন কোন সময় জীবাণুরা ইমিউন সিস্টেমকে পরাভূত করে ফেলে। তখন আমাদের দেহে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সৈন্য সামন্তদের সাথে এবার পরিচিত হয়ে নেয়া যাক। আমরা জানি মানুষের রক্তে লোহিতকণিকার পাশাপাশি শ্বেতকণিকাও থাকে। শ্বেতকনিকাগুলো হলো ইমিউন সিস্টেমের সৈন্য সামন্তের ধারক এবং বাহক। এদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমে রয়েছে ম্যাক্রোফাজ (Macrophage) সেল। এইসব কোষের কাজ হলো জীবাণুকে গিলে খাওয়া। এটা হলো প্রতিরক্ষার ব্যবস্থার প্রথম লাইন অফ ডিফেন্স। কিন্তু ম্যাক্রোফাজ জীবাণুকে গিলে খেলেও, এটা শতভাগ কার্যকর ব্যবস্থা নয়। জীবাণুর ক্ষতিকারক অংশবিশেষ মানুষের শরীরে থেকে যায়। এদের বলে অ্যান্টিজেন। জীবাণু ভেদে অ্যান্টিজেনের আণবিক গঠন বিভিন্ন ধরনের হয়। এরা মূলত প্রোটিন অণু। তবে এর সাথে লিপিড বা পলিস্যাকারাইড অণু যুক্ত থাকতে পারে। অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দ্বিতীয় লাইন অফ ডিফেন্স তখন কার্যকর হয়। এই স্তরে রয়েছে বি লিম্ফোসাইট (B Lymphocyte) সেল। এসব কোষ থেকে বিশেষ এক ধরনের ইমিউনোগ্লোবিন প্রোটিন উৎপন্ন হয়, যাদেরকে বলা হয় অ্যান্টিবডি। স্পেসিফিক এইসব অ্যান্টিবডিগুলো অ্যান্টিজেনের সাথে সংযুক্ত হয়ে সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করে। মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সর্বশেষ স্তরে রয়েছে টি লিম্ফোসাইট (T Lymphocyte) সেল। এরা সরাসরি রোগাক্রান্ত কোষকে আক্রমণ করে রোগের বিস্তার রোধ করে। মজার ব্যাপার হলো, লিম্ফোসাইট সেলগুলো জীবাণুর সাথে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কিছু কিছু "মেমোরি সেল" তৈরি করে রাখে, যাতে ভবিষ্যতে অ্যান্টিজেনগুলোকে সহজেই শনাক্ত করা যায়। তার মানে হলো, একই জীবাণু যদি মানুষকে আবারো আক্রমণ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে লিম্ফোসাইটের অ্যান্টিবডি তৈরি করার কাজটা তখন সহজ হয়ে যায়। "অচেনা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার চাইতে চেনা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করা সহজ" এটাই হলো আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমের প্রধান রণকৌশল।
আর এই রণকৌশলের উপর ভিত্তি করেই ভ্যাকসিন নির্মাণ করা হয়। ভ্যাকসিন নির্মাণের পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছিলেন এডওয়ার্ড জেনার নামে একজন বিজ্ঞানী। ১৭৯৬ সালে তিনি সর্বপ্রথম গুটিবসন্ত বা স্মলপক্সের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। তিনি কাউপক্সের জীবাণু সংগ্রহ করে একটি বালকের দেহে প্রবেশ করিয়েছিলেন। কাউপক্স স্মলপক্সের মত মারাত্মক রোগ নয়। কিন্তু এর ফলে বালকটির দেহে পক্সের জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং স্মলপক্সের জন্য তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যায়। এভাবেই যুগে যুগে জীবাণুর দুর্বল, মৃত অথবা পরিবর্তিত রূপ ব্যবহার করে গুটি বসন্ত, যক্ষা, হুপিংকাফ, পোলিও, ইয়েলো ফিভার ইত্যাদি বিভিন্ন ভয়াবহ রোগের কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। বাংলায় যাকে আমরা বলি টিকা।
সম্প্রতি কোভিড ১৯ মহামারী রোধে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউট অফ ভ্যাকসিন রিসার্চের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন। এই ভ্যাকসিনের নাম হলো ChAdOx 1 n CoV -19। আর এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রখ্যাত ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ডক্টর সারাহ গিলবার্ট। এর আগে তিনি মারস এবং ইবোলার ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণায় সফলতা পেয়েছিলেন।
এই নুতন ভ্যাকসিনটি নির্মাণে তাঁরা শিম্পাঞ্জি থেকে পাওয়া এক বিশেষ ধরনের এডেনোভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই ভেক্টরকে তাঁরা এমনভাবে জেনেটিক্যালি মডিফাই করেছেন, যাতে এটি মানুষের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। তারপর এই ভেক্টরের মধ্যে তাঁরা করোনাভাইরাসের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনের তথ্য ঢুকিয়ে দিয়েছেন। স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন হলো মানুষকে ঘায়েল করার জন্য করোনা ভাইরাসের মূল অস্ত্র। এটি একটি অ্যান্টিজেন।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এই অ্যান্টিজেনটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে এর বিরুদ্ধে স্পেসিফিক অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। তারপর লিম্ফোসাইটের মেমোরি সেলের মাধ্যমে ইমিউন সিস্টেম করোনাভাইরাসের অ্যান্টিজেনটিকে চিহ্নিত করে রাখবে। ভবিষ্যতে যদি কখনো করোনাভাইরাস তাকে আক্রমণ করে তাহলে স্পেসিফিক অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া ইমিউন সিস্টেমের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে। মোদ্দা কথা হলো ভ্যাকসিন দিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে আগেভাগেই প্রস্তুত করে রাখলে "চিহ্নিত শত্রু" করোনাভাইরাসকে কাবু করা সহজ হবে।
অ্যানিম্যাল ট্রায়ালে এই ভ্যাকসিনটি যথেষ্ট কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এখন এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল চলছে। স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটি প্রবেশ করানোর পর স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখা হবে। সেই সাথে এই ভ্যাকসিনের কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সেটা লক্ষ্য করা হবে। স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে কোভিড ১৯ এর কোনো লক্ষণ আছে কিনা সেটাও ভালোভাবে পরীক্ষা করা হবে। তবে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, তাদের শরীরে সরাসরি করোনাভাইরাস প্রবেশ করানো হবে না। ভ্যাকসিন টেস্টিং এর নীতিমালা এটা কোনভাবেই অনুমোদন করে না।
সারা পৃথিবী এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য।
তাঁদের এই পরীক্ষার শতভাগ সাফল্য কামনা করছি।
তথ্যসূত্র: Center for Disease Control (CDC), USA.
Edward Jennar Institute for Vaccine Research, Oxford University, UK.
Comments