কেমন হবে আগামী দিনের পৃথিবী, কেমন হবে ভবিষ্যতের মানুষ? মাঝে মাঝেই আমরা সেটা কল্পনা করার চেষ্টা করি। কিন্তু এটা শুধু নিছক কল্পনাই নয়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক বেশী এগিয়ে যাবে আগামী দিনের মানুষ। আগামীর পৃথিবী আমাদের কল্পনার পরিধি ছাড়িয়ে এগিয়ে যাবে অনেক অনেক দূরে।
অতীতের দিকে তাকালে মানুষের ভবিষ্যত কেমন হতে পারে তা সমন্ধে একটি ধারণা করা যায়। এখন থেকে মাত্র একশো বছর আগেও মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনকার মতো উন্নত ছিলোনা। দূর দেশে যাওয়া আসা ছিলো এক দুরূহ ব্যাপার। দিনের পর দিন জাহাজে ভাসতে হতো সাগরে। অথচ এখন জেট প্লেনে এক দেশ থেকে অন্যদেশে যাওয়া কোনো ব্যাপারই না। সিডনিতে সকালে নাস্তা করে দিব্যি রাতের খাবার ঢাকায় বসে খাওয়া যায়। ভবিষ্যতে এই যাত্রাটি আরো দ্রুত হবে সেটা বলাই বাহুল্য।
নিকট অতীতেও বিদেশে ফোনে কথা বলা ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। লাইন পাওয়া যেত না। আর লাইন পেলেও কথা কেটে কেটে যেত। আর এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে মুঠোফোনে মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বন্ধুর সাথে কথা বলা যায়। কথার সাথে সাথে তার ছবিও দেখা যায় ফোনে। আমাদের ছেলেবেলায় এটা ছিল এক অকল্পনীয় ব্যাপার। তথ্য প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য উন্নতির ফলে এখন খুব সহজেই মানুষের কাছে সারা দুনিয়ার খবর পৌঁছে যায় নিমিষের মধ্যে। এটাও একদিন ছিল আমাদের কল্পনার বাইরে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে নিকট অতীতেও যা ছিল অকল্পনীয় এখন সেটাই বাস্তব। অতএব এখন যেটা অকল্পনীয় মনে হচ্ছে সেটাই অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবে পরিণত হবে। তখন সেটাকেই স্বাভাবিক বলে মনে হবে।
এখন ধরা যাক জৈব প্রযুক্তির কথা। এক্ষেত্রে খুব দ্রুত গতিতে অভূতপূর্ব উন্নতি হচ্ছে প্রতি বছর। জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগামী দশকের মধ্যে ক্যান্সার এবং এইডসের মতো মরণ ব্যাধিকে মানুষ আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়। জিন এডিটিং করে নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আরেকটি সবুজ বিপ্লবের সূচনা হওয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
জৈব প্রযুক্তির পাশাপাশি ন্যানো প্রযুক্তিও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানব দেহের অভ্যন্তরে ন্যানো রোবট পাঠিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ ধ্বংস করা এখন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও আগামী দুই দশকের মধ্যে সেটাই ঘটতে পারে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়েও প্রচুর কাজ হচ্ছে। চালকবিহীন গাড়ি এখন আর কল্পনার বিষয় নয়। পৃথিবীর অনেক শহরেই এখন পরীক্ষামুলকভাবে চালকবিহীন গাড়ি দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী এক দশকের মধ্যেই চালকবিহীন গাড়ি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। পেট্রোল চালিত গাড়ি হয়ে যাবে অতীত ইতিহাস। গাড়ি চলবে সৌর বিদ্যুতে।
সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহে পৌঁছে যাবে মনুষ্যবাহী নভোযান। ধীরে ধীরে পৃথিবীর বাইরে ও গড়ে তোলা হবে মানব বসতি। সৌরজগতের বাইরে ও চলবে মানুষের অভিযান। আজ এটাকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হলেও ভবিষ্যতে এটাই হবে বাস্তব। সম্ভবত আগামী শতাব্দীর মধ্যেই এটা সম্ভব হবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব
উন্নতির ফলে মানুষের জীবনকাল বৃদ্ধি পাবে বহুগুন। এর পাশাপাশি ডি এন এ মেরামতের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করে চির যৌবন অটুট রাখাটাও বিচিত্র কিছুনা। সম্ভবত এই শতাব্দী শেষ হবার আগেই এই অসাধ্য কাজটা সম্পন্ন করবে মানুষ।
আজ যে শিশুটির জন্ম হয়েছে সে হয়তো সুস্থ দেহে বেঁচে থাকবে কয়েকশ বছর। এটা এখন কল্পনা মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে কল্পনাকেই বাস্তবে পরিণত করে বিজ্ঞান। যুগে যুগে সেটাই হয়ে এসেছে।
(এই পুরো লেখাটাই ভয়েস কমান্ড দিয়ে লিখলাম। ভবিষ্যতের প্রযুক্তির কিছুটা মনে হয় আমাদের হাতের মুঠোয় এখনি চলে এসেছে )
Comments