কর্কটক্রান্তি রেখা

২১ জুন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন। এই দিনে সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর সরাসরি অবস্থান করে। বর্ষ পরিক্রমায় সূর্যের উত্তরমুখী যাত্রা, যাকে বলে উত্তরায়ণ, এখানেই এসে শেষ হয়।  

তারপর শুরু হয় সূর্যের দক্ষিণমুখী যাত্রা। যার নাম হলো, দক্ষিণায়ণ। উত্তর গোলার্ধে দিন তখন ছোট হতে থাকে, কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য আস্তে আস্তে বড় হওয়া শুরু হয়।  বিষুব রেখার দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখায় (Tropic of Capricorn) এসে সূর্যের দক্ষিণায়ণ শেষ হয় ২১ ডিসেম্বর। এই দিন সূর্য মকর ক্রান্তির উপর সরাসরি অবস্থান করে। এই দিন  দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে বড় দিন।‌ 

এরপর আবার শুরু হয় সূর্যের উত্তরায়ন। ধীরে ধীরে উত্তর গোলার্ধে দিন আবার বড় হয়। এভাবেই পৃথিবীর দুই গোলার্ধে সূর্যের উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ণ অনাদিকাল থেকেই  চলে আসছে। এটাই ঋতু পরিবর্তনের কারণ। সূর্যের এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণে উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন  শীতকাল। 

সূর্যের কক্ষপথে পৃথিবী প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকায় বর্ষ পরিক্রমায় পৃথিবী থেকে সূর্যের অবস্থানের এই আপাত পরিবর্তন হয়। 

কর্কটক্রান্তি রেখার অবস্থান বিষুবরেখার উত্তরে ২৩ ডিগ্রী ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড অক্ষাংশে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক রেখা। ‌  কুমিল্লা শহরের কাছাকাছি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে।   

পৃথিবীর অনেক দেশেই গুরুত্বপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি অথবা মকরক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে।‌ এইসব জায়গায় জনস্বার্থে এসব রেখা মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে । এসব রেখার ভৌগলিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 

উত্তর গোলার্ধে ভারত, তাইওয়ান, মেক্সিকো সহ অন্যান্য অনেক দেশে কর্কটক্রান্তি রেখার মার্কার রয়েছে। দক্ষিণ গোলার্ধে অস্ট্রেলিয়াতে মকরক্রান্তি রেখার মার্কার আমি নিজেই দেখেছি। পৃথিবীর সবদেশেই এসব রেখাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়।  

পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশে কর্কটক্রান্তি রেখাকে এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েও কোনো কাজ বাস্তবায়িত হয়নি। ‌বাংলাদেশে কুমিল্লার কাছে কর্কটক্রান্তি রেখা চিহ্নিত করে এর গুরুত্ব বর্ণনা করার প্রয়োজন রয়েছে। এটা করতে পারলে জনসাধারণের মধ্যে এ ব্যাপারে আগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। ছাত্র-ছাত্রীরাও এর ফলে উপকৃত হবে। এটি তেমন ব্যয়বহুল কোন প্রকল্প নয়। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগেই এটা করা সম্ভব। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


Comments