কোয়ান্টাম বায়োলজি

বস্তুকণাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগত চলে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মে। এই জগতের নিয়ম কানুন আমাদের পারিপার্শ্বিক দৃশ্যমান জগতের চেয়ে অনেক আলাদা। কিন্তু বর্তমান যুগের অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতের এসব নিয়ম অনেক ক্ষেত্রে জীবজগতের জন্যও প্রযোজ্য। ‌এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করার জন্য জীববিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখা, যার নাম হলো কোয়ান্টাম বায়োলজি।  এ নিয়ে গবেষণার কার্যক্রম নতুন হলেও, এর পেছনের ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরোনো। এনিয়ে আলোচনা করার আগে এর ইতিহাসটি একটু দেখে নেয়া যাক। 

বিশ্বখ্যাত ডেনিশ পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর  ছিলেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একজন প্রধান রূপকার। তিনিই সর্বপ্রথম কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর ভিত্তি করে পদার্থের পারমাণবিক গঠনের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এই আবিষ্কারটির জন্য তিনি ১৯২২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির দশ বছর পর,  ১৯৩২ সালে কোপেনহেগেনে এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে তিনি একটি বক্তৃতা করেছিলেন। তাঁর এই বক্তৃতাটির বিষয়বস্তু ছিল, আলো এবং জীবন (Light and Life)।  এই বক্তৃতায় তিনি জীবজগতের অন্তর্নিহিত কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছিলেন। তাঁর এই বক্তৃতা একজন তরুণ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল। তাঁর নাম ম্যাক্স ডেলব্রুক। তিনি ছিলেন জার্মান।  নীলস বোরের বক্তৃতায় অনুপ্রাণিত হয়ে ম্যাক্স ডেলব্রুক পদার্থবিজ্ঞানের পরিবর্তে জীববিজ্ঞানের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে তাঁর হাত ধরেই মলিকিউলার বায়োলজি জীববিজ্ঞানের একটি বিশেষায়িত শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে বলে রাখি, ম্যাক্স ডেলব্রুক মলিকিউলার বায়োলজিতে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৬৯ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।‌ 

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আরেক দিকপাল ছিলেন আরউইন শ্রোডিঙ্গার। ১৯২৬ সালে শ্রোডিঙ্গারই  তাঁর ওয়েভ ফাংশন সমীকরণের মাধ্যমে বস্তুকণার কোয়ান্টাম অবস্থানের গাণিতিক ব্যাখা দিয়েছিলেন। আমরা জানি, কোয়ান্টাম জগতে বস্তুকণারা একই সাথে কণা এবং তরঙ্গ  দ্বৈত রূপেই থাকতে পারে। সেজন্য সুনির্দিষ্টভাবে বস্তুকণাদের অবস্থান নির্ণয় করা যায়না। এটি করতে হলে শ্রোডিঙ্গারের ওয়েভ ফাংশন সমীকরণের সাহায্য নিতে হয়। এই অনন্য আবিষ্কারটির জন্য ১৯৩৩ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। 

পদার্থবিজ্ঞানী হলেও শ্রোডিঙ্গার জীবজগতের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গুরুত্ব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৪৪ সালে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ বই প্রকাশ করেছিলেন।  বইটির নাম ছিলো, What is life? এই বইটিতে তিনি জীবকোষের ভেতরে এক বিশেষ ধরনের অণুর উপস্থিতির কথা বলেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, এই যৌগিক অণুটির রাসায়নিক বন্ধনের মধ্যেই জীবজগতের সকল তথ্য লুকিয়ে আছে। তিনি আরও বলেছিলেন, এই অণুটির অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রনের কক্ষপথ পরিবর্তনের ফলে জীবজগতে মিউটেশন হয়। বলাই বাহুল্য, তখনো ডিএনএ অণুর গঠন প্রণালী বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা ছিল। 

১৯৫৩ সালে ফ্রান্সিস ক্রিক এবং জেমস ওয়াটসন ডিএনএ অণুর ডবল হিলিক্স কাঠামোটি আবিষ্কার করেন। এই কাঠামোটি আবিষ্কৃত হবার পর মলিকিউলার বায়োলজিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়। একটি ডিএনএ অণু থেকে হুবহু আরেকটি ডিএনএ অণু কিভাবে তৈরি সেটাও বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন। একে বলে ডিএনএ রেপ্লিকেশন। তারপর ডিএনএ অণু কিভাবে প্রোটিন তৈরির কোডকে ধারণ করে সেটাও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করে ফেললেন। এসব গবেষণার ফলে আমরা এখন জানি, জীবজগতের বংশগতির ধারক ও বাহক হলো ডি এন এ অণু। এক কথায় বলা যায়,

জীবনের ব্লু প্রিন্টকে ধারণ করে ডিএনএ অণু।  এই অণুটির ভৌত রাসায়নিক গঠনের মধ্য দিয়েই জীবজগতের অনেক অজানা বিষয়কে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করতে পারলেন। কিন্তু এর জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কোন প্রয়োজন হলো না। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাহায্য ছাড়াই দুর্বার গতিতে এগিয়ে চললো মলিকিউলার বায়োলজি এবং জেনেটিক্স। পদার্থবিজ্ঞানীরাও ভৌত জগতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রয়োগ নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। জীবজগৎ নিয়ে তাঁরা আর বিশেষ মাথা ঘামালেন না। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের দু'টি শাখা দু'দিকে মোড় নিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পঞ্চাশ বছর পর বর্তমান শতাব্দীতে এসে বায়োলজির সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবার দেখা হয়েছে। 

বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা জীবজগতের অন্তর্গত অনেক অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শরণাপন্ন হচ্ছেন। সালোকসংশ্লেষণ বা ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার কথাই ধরুন। এই প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ পানি এবং কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে আলোকরশ্মির সাহায্যে কার্বোহাইড্রেড এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে। পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের ক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব অপরিসীম। এই রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্যেই উদ্ভিদ তার নিজের খাদ্য নিজেই প্রস্তুত করতে পারে। উদ্ভিদের উপর নির্ভর করেই যাবতীয় প্রাণীকুল বেঁচে থাকে। মোদ্দা কথা হলো, সালোকসংশ্লেষণ না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ হতো না। বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। তারা দেখেছেন, এই রাসায়নিক প্রক্রিয়াটির সূচনা হয় উদ্ভিদ কোষের ক্লোরোফিল পিগমেন্টের ভেতরে। সূর্যের আলোর ফোটন কণার আঘাতে ক্লোরোফিলের অন্তর্গত ম্যাগনেসিয়াম পরমাণুর একটি ইলেকট্রন স্থানচ্যুত হয়। ‌এই স্থানচ্যুত ইলেকট্রনটিকে বলা হয়, এক্সাইটন।‌ স্থানচ্যুত হবার পর এই এক্সাইটনটি উদ্ভিদ কোষের সালোকসংশ্লেষণ বিক্রিয়া কেন্দ্রে ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যেই পৌঁছে যায়। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, এই স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি প্রায় শতভাগ কার্যকর ভাবে সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ ‌এক্ষেত্রে কোন ইলেকট্রনের অপচয় হয় না। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ কিভাবে এতটা দক্ষতার সাথে ইলেকট্রন স্থানান্তর করতে পারে এ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দ্বারস্থ  হয়েছেন। বিজ্ঞানীরা জানেন, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম অনুযায়ী বস্তুকণারা একই সাথে একাধিক অবস্থানে থাকতে পারে। একে বলে, সুপারপজিশন।  বিজ্ঞানীদের ধারণা, কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের ফলেই স্থানচ্যুত ইলেকট্রনটি তরঙ্গের আকারে একাধিক সম্ভাব্য পথে সালোকসংশ্লেষণের বিক্রিয়া কেন্দ্রে অতি দ্রুতই পৌঁছে যায়। তবে এ ব্যাপারে অনেক বিজ্ঞানী এখনো নিশ্চিত নন। তার কারণ হলো, সাধারণ তাপমাত্রায় উদ্ভিদ কিভাবে বস্তুকণার কোয়ান্টাম অবস্থানকে ধরে রাখতে পারে সেটার ব্যাখ্যা দেয়াটা কঠিন। সাধারণত বস্তুকণার কোয়ান্টাম অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে হলে তাপমাত্রা  প্রায় পরম শূন্যের (মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাছাকাছি নামিয়ে আনতে হয়।  বলাই বাহুল্য, এই তাপমাত্রায় উদ্ভিদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করার জন্য বর্তমানে আল্ট্রাফাস্ট স্পেকট্রোস্কপি, সিঙ্গেল মলিকিউল স্পেকট্রোস্কপি, টাইম রিজলভড মাইক্রোস্কপি, সিঙ্গেল পার্টিকেল ইমেজিং ইত্যাদি অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম পর্যায়ে সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিটিকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছেন। আশা করা যাচ্ছে, এর ফলে কোয়ান্টাম বায়োলজি গবেষণায় অনেক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। 

ডিএনএ মিউটেশনের ক্ষেত্রেও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগেই বলেছি, ডিএনএ হলো জীব জগতের জেনেটিক কোডের ধারক এবং বাহক।  জেনেটিক কোডের বর্ণমালায়  রয়েছে ডিএনএর  চারটি নাইট্রোজেন বেইস। এদের নাম হলো অ্যাডেনিন, থায়মিন, সাইটোসিন এবং গুয়ানিন। এদেরকে নামের চারটি আদ্যক্ষর (ATGC) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ডিএনএ অণুর ভেতর A জোড় বেঁধে থাকে T এর সাথে, আর C জোড় বেঁধে থাকে G এর সাথে। এই  নাইট্রোজেন বেইসগুলোর সামগ্রিক বিন্যাসে যাবতীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর জিনোম রচিত হয়েছে। ডিএনএ অণুতে অনেক সময় প্রাকৃতিক ভাবেই নাইট্রোজেন বেইসগুলোর অবস্থানের পরিবর্তন হয়। একে বলে মিউটেশন। এর ফলে জীবের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হতে পারে। মিউটেশনের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর একটি প্রধান কারণ হলো ডিএনএ রেপ্লিকেশনের সময় মাঝে মাঝে G/C জোড়টি A/T জোড়ে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে, অথবা এর উল্টোটাও হতে পারে।‌ বিজ্ঞানীরা জানেন, ডিএনএ অণুর ভেতরে এই জোড় বাধার কাজটি করে হাইড্রোজেন পরমাণু। তাদের ধারণা, ডিএনএ অণুর ভেতরে হাইড্রোজেন পরমাণুর অবস্থান পরিবর্তনের কারণেই এই মিউটেশনটি হয়ে থাকে। এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের ফলেই এটি হচ্ছে। এটি বস্তুকণার একটি অন্যতম কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য। এর ফলে একটি বস্তুকণা শক্ত কোন বাহ্যিক বাঁধা অতিক্রম করে অনায়াসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে। তবে বস্তুকণা ভারী হলে তার কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের সম্ভাবনা কমে যায়।‌ সেজন্য বিজ্ঞানীরা ডিএনএর হাইড্রোজেন বন্ডে সাধারণ হাইড্রোজেনের পরিবর্তে হাইড্রোজেনের ভারী  আইসোটোপ ডিটোরিয়াম ব্যবহার করে দেখেছেন, এতে ডিএনএ মিউটেশনের পরিমাণ অনেক কমে যায়।  সেজন্য তাঁরা ডিএনএ মিউটেশনের সাথে কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের একটি যোগসুত্র খুঁজে পেয়েছেন। এটি কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের স্বপক্ষে একটি বড় প্রমাণ এবং নিঃসন্দেহে একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। 

জীবজগতে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের এনজাইমের প্রয়োজন হয়। এই এনজাইমগুলো প্রধানত অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এরা মূলত প্রোটিন অণু। এই প্রোটিন অণুগুলি জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াকে বহুগুণে ত্বরান্বিত করে। এনজাইম কিভাবে কাজ করে, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটাও কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের ফলেই সম্ভব হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায়  এনজাইমগুলো কোন বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই অতি দ্রুত  ইলেকট্রন এবং প্রোটন কণাগুলোকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তরিত করছে। এর ফলে  জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার গতি বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে বর্তমানে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। 

মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী এবং বুদ্ধিবৃত্তির ব্যাখ্যার জন্যও আজকাল কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। এব্যাপারে, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী  পদার্থবিজ্ঞানী রজার পেনরোজের ভূমিকা অগ্রগণ্য।  তাঁর লেখা, Emperor's New Mind, বইটিতে এ ব্যাপারে তিনি আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, ব্রেনের নিউরন‌ কোষের মাইক্রো টিউবিউলের অভ্যন্তরে বস্তুকণার কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের পরিবর্তনের ফলে মানুষের মস্তিষ্কে অনুভবের  (consciousness) সৃষ্টি হয়। যদিও এর স্বপক্ষে কোন পরীক্ষামূলক প্রমাণ এখনো নেই। তবে, সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজের একদল বিজ্ঞানী, মানুষের ব্রেনের নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স (NRM) স্পেকট্রোস্কপি করে দেখিয়েছেন, মস্তিষ্কে অনুভুতি প্রকাশের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্টের ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা গেলে, ভবিষ্যতে একে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতির কোয়ান্টাম কিউবিটস তৈরি করার কাজটি সহজ হয়ে যাবে।‌

কোয়ান্টাম বায়োলজি নিয়ে গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি বিজ্ঞানের একটি উদীয়মান শাখা।  আমরা আশা করতে পারি, এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা আরো গবেষণা করে ভবিষ্যতে অনেক নতুন বিষয় আবিষ্কার করবেন। বিশেষত জীবজগতের সাধারন তাপমাত্রায় বস্তুকণাদের কোয়ান্টাম অবস্থান কিভাবে অক্ষুণ্ণ থাকে সেটি জানাটা খুবই জরুরী। এটি জানা হলে, একে কাজে লাগিয়ে মানুষের পক্ষে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সহ অনেক  নতুন এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি আবিষ্কার করা সহজ হবে। বর্তমান প্রজন্মের বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে আগ্রহী হলে বিজ্ঞানের এই নবীন শাখাটি নিঃসন্দেহে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।‌ 

বিঃদ্রঃ: মূল প্রবন্ধটি আরো বিশদ আকারে  আমার লেখা 'বিচিত্র বিজ্ঞান' বইয়ে পাওয়া যাবে।

© তানভীর হোসেন

Comments