আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো আমরা একটা ব্ল্যাকহোলের ছবি দেখেছিলাম। ছবিটি তোলা হয়েছিলো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা আটটি ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের সাহায্যে। এটা ছিল বিজ্ঞানের জগতে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
ছবিটা ছিল M87 নামের দূর-আকাশের একটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থ ব্ল্যাকহোলের। এর নাম দেওয়া হয়েছিল M87* (এম-এইটি-সেভেন স্টার)। এই ব্ল্যাকহোলটা এতটাই বিশাল যে এর ভর আমাদের সূর্যের থেকেও ৬.৫ বিলিয়ন গুণ বেশি! আর দূরত্ব? প্রায় ৫৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে! ভাবা যায়?
এই ছবির পর বিজ্ঞানীরা চোখ-কান খোলা রেখে বহুদিন ধরে নজর রাখছিলেন সেই রহস্যময় M87* এর ওপর। আর এখন তারা এক চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। জানা গেছে, এই ব্ল্যাকহোলটা ভয়ংকর গতিতে ঘুরছে। কতোটা জোরে? শুনলে অবাক হবেন। এটি নিজের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য গতি অর্থাৎ আলোর গতির কাছাকাছি হারে ঘুরছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ঘূর্ণনের হার আলোর গতির প্রায় ৮০ শতাংশ। এখানে বলে রাখি, আলোর গতিকেই বস্তুর গতির সর্বোচ্চ সীমারেখা ধরা হয়।
এত দ্রুত ঘোরার কারণে ব্ল্যাকহোলের চারপাশে যে গ্যাস আর মহাজাগতিক ধূলিকণার চাকা তৈরি হয়েছে, তার নাম "অ্যাক্রেশন ডিস্ক"। এই ডিস্কটা আলোর প্রায় ১৪% গতিতে ঘুরছে। এই চাকার ঘূর্ণি, আলো আর ছায়ার খেলাই বিজ্ঞানীদের সাহায্য করেছে ব্ল্যাকহোলের ঘূর্ণনের হিসাব বুঝতে।
আর শুধু ঘোরা নয়, এই M87* কিন্তু আশেপাশের সবকিছু গিলে খাচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ০.০০০০৪ থেকে ০.৪ সৌর ভরের সমান পদার্থ সে নিজের মধ্যে টেনে নিচ্ছে। ব্ল্যাকহোলের জন্য এটা সকালের নাস্তার মত এক ধরনের "হালকা-খিদে" বলা যায়।
এই গিলে ফেলার সময় ব্ল্যাকহোল প্রচণ্ড শক্তি ছড়িয়ে দেয়, আর সেই শক্তিই মহাকাশ ছুঁয়ে এক এক করে তৈরি করে বিশাল শক্তিশালী জেট, যেগুলো হাজার হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
এই গবেষণার ফলে শুধু M87* ব্ল্যাকহোল নয়, বরং সকল ব্ল্যাকহোলের ঘূর্ণনের চরিত্র, তাদের খিদে আর সেই খাওয়ার প্রক্রিয়া থেকে তৈরি হওয়া শক্তির বিশ্লেষণ বিজ্ঞানীদের আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করছে। ব্ল্যাকহোলই হয়ে উঠেছে মহাবিশ্বের গঠন বোঝার জন্য আশ্চর্য এক পর্দায় ঘেরা জানালা।
Comments