স্কটল্যান্ড ছোট্ট দেশ। জনসংখ্যা মাত্র ৫.৪ মিলিয়ন। ইংল্যান্ডের দশ ভাগেরও কম। সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় দেশ স্কটল্যান্ড, ইউনাইটেড কিংডমের অংশ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি, বহুদিন আগে থেকেই মেডিকেল আর বায়োলজিক্যাল গবেষণায় অনেক বড় বড় সাফল্যের জন্য স্কটল্যান্ড বিখ্যাত। এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এমন সব আবিষ্কার হয়েছে, যেগুলো বদলে দিয়েছে সারা বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থা আর বর্ধিত করেছে আমাদের জীববিজ্ঞানের জ্ঞান।
সবচেয়ে আলোড়ন তোলা ঘটনা সম্ভবত ১৯৯৬ সালের "ডলি দ্য শীপ" নামের ভেড়াটির জন্ম, যেটি ছিল বিশ্বের প্রথম ক্লোন করা স্তন্যপায়ী প্রাণী। এডিনবরার কাছে রোজলিন ইনস্টিটিউটে বিজ্ঞানীরা ডলিকে তৈরি করেন একটি পূর্ণবয়স্ক ভেড়ার কোষ থেকে। এটা প্রমাণ করে, পূর্ণাঙ্গ কোষ থেকেও নতুন প্রাণ তৈরি করা সম্ভব। এই আবিষ্কার শুধু জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, মানব ক্লোনিং ও স্টেম সেল গবেষণার ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়।
তারও অনেক আগে, ১৯৭৮ সালে, স্কটল্যান্ডের অদূরে ইংল্যান্ডে জন্ম হয়েছিল বিশ্বের প্রথম টেস্টটিউব বেবি লুইস ব্রাউন। কিন্তু তার ঠিক কয়েক বছরের মাথায় স্কটল্যান্ডেই চালু হয় বিশ্বের অন্যতম প্রথম IVF প্রোগ্রাম, যেটি বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যার সমাধান এনে দেয় হাজার হাজার দম্পতির জন্য। আর স্কটিশ চিকিৎসকদের হাত ধরেই ১৯৮০’র দশকের শুরুতে ইউরোপে প্রথম সফল ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিও সম্পন্ন হয়। পেট কাটা ছাড়াই ছোট ফুটো দিয়ে অভ্যন্তরীণ অস্ত্রোপচার করার পদ্ধতি, এবং আজকে সেটা আধুনিক সার্জারির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এরপর আসে স্টেম সেল রিসার্চ আর রিজেনারেটিভ মেডিসিনের দিক থেকে স্কটল্যান্ডের অবদান। এডিনবরা এবং গ্লাসগো ইউনিভার্সিটিতে গবেষকরা বহু বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন হার্ট, লিভার বা ব্রেইনের কোষ নতুন করে গড়ে তোলার উপায় নিয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা সফলও হয়েছেন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো জেনেটিক গবেষণা। স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া “UK Biobank” প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ মানুষের জেনেটিক তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করা হচ্ছে কোন কোন জিন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা আলঝেইমারের মতো রোগের জন্য দায়ী। এটা ভবিষ্যতের “পারসোনালাইজড মেডিসিন”-এর জন্য একটা বিশাল পদক্ষেপ।
গ্লাসগো আর ডান্ডির গবেষকরা আবার নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক আর ক্যান্সার থেরাপি নিয়েও কাজ করছেন। এমনকি স্কটল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক আগে থেকেই রোগ চিহ্নিত করার পদ্ধতিও তৈরি করছেন। কোভিড-১৯ এর সময়েও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে, শান্তিপূর্ণ সবুজ পাহাড় আর হ্রদের দেশে, নিরবে-নিভৃতে একদল বিজ্ঞানী দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের জীবনকে আরও নিরাপদ, আরও দীর্ঘ, আর সুস্থ করে তোলার জন্য। স্কটল্যান্ড শুধু গল্প-উপন্যাসের রাজ্য নয়, এই দেশটি বিজ্ঞানের পাতায়ও এক চিরস্থায়ী ছাপ রেখে চলেছে।
Comments