মানুষের রক্তের রঙ লাল আর গাছের পাতার রঙ সবুজ—এই দুইয়ের মাঝে কোনও মিল থাকতে পারে? প্রথমে শুনলে মনে হতে পারে, এ আবার কেমন অদ্ভুত প্রশ্ন! কিন্তু বিজ্ঞানের চোখে দেখলে, দেখা যায় এই দুই রঙের পেছনে থাকা অণুগুলোর গঠনে এতটাই মিল রয়েছে, যে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। শুধু মাঝখানে রয়েছে একটি ছোট্ট পার্থক্য—একটি ধাতব পরমাণু।
এই ছবিটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি দুটি জটিল রাসায়নিক গঠন। একদিকে গাছের ক্লোরোফিল, অন্যদিকে আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিন। এ দু'টির গঠন একটি বিশেষ ধরনের অণু ভিত্তিক, যার নাম পোরফিরিন রিং। এটি একটি চক্রাকার কাঠামো, যেখানে চারটি নাইট্রোজেন পরমাণু মিলে একটি ধাতব পরমাণুকে ঘিরে ধরে রাখে। এই রিংয়ের মাঝখানে যদি থাকে ম্যাগনেসিয়াম (Mg), তাহলে সেটা ক্লোরোফিল; আর যদি থাকে আয়রন (Fe), তাহলে সেটা হিমোগ্লোবিনের হিম গ্রুপ।
এই একটি ছোট্ট পার্থক্যই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজকে সম্ভব করেছে।
ক্লোরোফিল সূর্যের আলো শোষণ করে উদ্ভিদের ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে—কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি থেকে গ্লুকোজ ও অক্সিজেন তৈরি হয়। অন্যদিকে, হিমোগ্লোবিন হলো আমাদের রক্তের একটি প্রোটিন। যার কাজ হচ্ছে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেয়া।
ভাবতে অবাক লাগে, একই ধাঁচের একটি রাসায়নিক কাঠামো দিয়ে প্রকৃতি কী দারুণভাবে দুটি ভিন্ন কিন্তু পরস্পর নির্ভরশীল প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে! একদিকে গাছ সূর্যের আলো ব্যবহার করে অক্সিজেন তৈরি করছে, আর অন্যদিকে মানুষ সেই অক্সিজেন শ্বাস নিয়ে নিজের শক্তি জোগাড় করছে। সবুজ পাতার পোরফিরিন রিং তৈরি করে দিচ্ছে জীবনদায়ী অক্সিজেন, আর লাল রক্তের পোরফিরিন রিং সেই অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের শরীরে।
এটা কিন্তু কোনও কাকতালীয় মিল নয়। এটা জীবজগতের এক অদ্ভুত সংযোগের নিদর্শন। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের মধ্যে এই গভীর রাসায়নিক সম্পর্ক আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমরা প্রকৃতির সাথে কতটা অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। আমরা যখন নিঃশ্বাস নেই, তখন গাছের পাতার সঙ্গে গড়ে ওঠে জীবনের এক অদৃশ্য সেতু বন্ধন। লাল আর সবুজের এই মিল কেবল রঙের খেলা নয়—এটা জীবনের এক গভীর আত্মীয়তা।
Comments