অস্ট্রেলিয়াতে তৈরি হচ্ছে টলিম্যান (TOLIMAN) নামে একটি নতুন মহাকাশ টেলিস্কোপ। এর মূল উদ্দেশ্য, আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র যুগল, আলফা সেন্টোরির চারপাশে নতুন গ্রহের সন্ধান করা। বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বাইরের মহাকাশে এমন সব গ্রহ খুঁজছেন যেখানে তরল পানি থাকতে পারে, কারণ পানির অস্তিত্ব থাকলে সেখানে প্রাণের সম্ভাবনাও থাকে।
এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আলফা সেন্টোরি এ এবং বি নামের নক্ষত্র যুগলের চারপাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহের সন্ধান করবেন। যদি এমন কোনো গ্রহ পাওয়া যায় যেখানে পৃথিবীর মতো পরিবেশ থাকতে পারে, তাহলে সেটি ভবিষ্যতের জন্য বড় একটি আবিষ্কার হবে। পৃথিবী থেকে আলফা সেন্টোরি সিস্টেমের দূরত্ব প্রায় ৪.৩৭ আলোকবর্ষ। এরা সূর্যের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী নক্ষত্র।
এই টেলিস্কোপে একটি বিশেষ ধরনের লেন্স ব্যবহার করা হবে, যা নক্ষত্রের আলোকে আড়াল করে নতুন গ্রহ শনাক্ত করতে পারবে। এছাড়া, যখন কোনো গ্রহ একটি বড় নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে, তখন গ্রহটির মহাকর্ষ বল নক্ষত্রটির গতিপথে সামান্য প্রভাব ফেলে। টলিম্যান সেই ছোট ছোট বিচ্যুতিগুলো পর্যবেক্ষণ করবে, যাতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন সেখানে আদৌ কোনো নতুন গ্রহ আছে কিনা।
এটি খুব বড় কোনো টেলিস্কোপ নয়, বরং এটি একটি ছোট উপগ্রহ বা কিউবস্যাট আকারে তৈরি হচ্ছে। ফলে এটি সহজেই মহাকাশে পাঠানো যাবে এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এটি মহাকাশে পাঠানো হবে এবং পৃথিবীর প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার ওপরে কক্ষপথে অবস্থান করবে।
টলিম্যান গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রকল্পের নেতৃত্ব রয়েছেন প্রফেসর পিটার টুথিল। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির গবেষক এবং সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। প্রফেসর টুথিল একজন অভিজ্ঞ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং উচ্চতর প্রযুক্তির অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল যন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। ইতিপূর্বে তিনি নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে ইন্টারফেরোমিটার প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করেছেন।
এর পাশাপাশি নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি এবং স্পাইরাল ব্লুর মত অস্ট্রেলিয়ান স্টার্ট আপ কোম্পানিও এই প্রকল্পে কাজ করছে। স্পাইরাল ব্লুর তৈরি এ আই চালিত স্পেস এজ (SE1) কম্পিউটার এই মিশনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কারণ, স্পেস এজ কম্পিউটার টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য মহাকাশেই রিয়েল টাইমে বিশ্লেষণ করতে পারবে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে, স্পাইরাল ব্লু প্রথম অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি হিসেবে মহাকাশে তাদের স্পেস এজ কম্পিউটার সফলভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। প্রথম স্পেস এজ কম্পিউটার তৈরি করার জন্য স্পাইরাল ব্লু একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। এখানে বলে রাখি, স্পাইরাল ব্লুর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও তৌফিক হক, একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত তরুন মহাকাশ প্রকৌশলী এবং উদ্যোক্তা।
টলিম্যান মিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর মতো নতুন কোনো গ্রহ খুঁজে পান, তাহলে সেটি হবে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটি ভবিষ্যতে মানুষের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে এবং হয়তো একদিন আমরা অন্য কোনো গ্রহে বসবাসের সুযোগ পাবো। এছাড়াও, টলিম্যান টেলিস্কোপ আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহ বা এক্সোপ্ল্যানেট সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য দেবে, যা মহাকাশ গবেষণার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান হবে।
এই মিশন সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে চাইলে এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (toliman.space) ঘুরে দেখতে পারেন।
ছবি কৃতজ্ঞতা: TOLIMAN - Telescope for Orbit Locus Interferometric Monitoring of our Astronomical Neighbourhood
Comments