ব্লু ঘোস্ট: চন্দ্র জয়ের এক নতুন অধ্যায়

ব্লু ঘোস্ট আমেরিকার ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের তৈরি এক অত্যাধুনিক মনুষ্যবিহীন চন্দ্রযান। এ মাসের ২ তারিখে ব্লু ঘোস্ট চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণ করেছে। এর প্রধান কাজ হবে, চাঁদের মাটিতে বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো। এই মিশন চাঁদ নিয়ে গবেষণার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি এটি স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ রকেটে চড়ে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশে পাড়ি জমায়। প্রায় ৪৫ দিন পর, ২ মার্চ ২০২৫ তারিখে, ব্লু ঘোস্ট সফলভাবে চাঁদের "মারে ক্রিসিয়াম" প্রান্তরে সফলভাবে অবতরণ করে। চাঁদের দিন-রাতের চক্রের কারণে এই মিশন মাত্র ১৪ দিন চালু থাকবে। কারণ চাঁদে রাতের বেলায় প্রচণ্ড ঠান্ডায় যন্ত্রপাতি সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

ব্লু ঘোস্ট চাঁদের বুকে মোট ১০টি বিশেষ বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম নিয়ে গেছে। এসব যন্ত্রপাতি নির্বাচন করেছে নাসা। এগুলোর কাজ হবে চাঁদের মাটি ও আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করা। বিশেষত চন্দ্রপৃষ্ঠে ধুলো কীভাবে আচরণ করে তা বোঝা, চাঁদের অভ্যন্তরীণ কাঠামো সম্পর্কে জানা এবং পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব আরও নিখুঁতভাবে মাপা। এর মধ্যে একটি যন্ত্র চাঁদের মাটির তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারে, আরেকটি চাঁদের অভ্যন্তরে তাপ প্রবাহ বোঝার জন্য মাটিতে গর্ত খুঁড়বে। এই মিশনে এমন একটি বিশেষ ক্যামেরাও আছে, যা চাঁদের মাটিতে রকেটের ইঞ্জিনের ধাক্কায় কী ধরনের পরিবর্তন হয় তাও রেকর্ড করবে।

এছাড়াও, ব্লু ঘোস্টে এমন এক প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হবে, যা চাঁদের ধুলো সরিয়ে ফেলার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে। এটি ভবিষ্যতে চাঁদে বসবাসের পরিকল্পনায় খুবই কাজে আসবে, কারণ চাঁদের ধুলো অত্যন্ত আঠালো এবং যেকোনো যন্ত্রের উপর জমে যেতে পারে। 

মজার বিষয় হলো, এই মিশনে একটি বিশেষ টাইম ক্যাপসুল রাখা হয়েছে, যেখানে মানব সভ্যতার নানা সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষণ করা হয়েছে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনো এটি খুঁজে পায়।

চাঁদে ব্লু ঘোস্টের সফল অবতরণ বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলোর জন্য এক বিরাট মাইলফলক। এর আগে, ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, ইনটুইটিভ মেশিনস-এর ওডিসিয়াস মিশন চাঁদে অবতরণ করেছিল। তবে অবতরণের সময় ল্যান্ডারের একটি পা ভেঙে যায় এবং এটি চাঁদের ঢালু পৃষ্ঠে কাত হয়ে ১৮° কোণে অবস্থান নেয়। যদিও ল্যান্ডারটি টিকে ছিল এবং এর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কার্যকর ছিল। কিন্তু এটি পুরোপুরি স্থিতিশীল অবস্থায় অবতরণ করতে পারেনি।

অন্যদিকে, ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের ব্লু ঘোস্ট সম্পূর্ণ স্থিতিশীল ও নিরাপদভাবে চাঁদে অবতরণ করেছে, কোনো ধরনের ক্ষতি ছাড়াই। ফলে, এটি ইতিহাসে প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে সম্পূর্ণ সফল চন্দ্র অবতরণ করার গৌরব অর্জন করেছে।

ব্লু ঘোস্ট মিশন নাসার আর্টেমিস কর্মসূচির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে। নাসার চলমান আর্টেমিস মিশনের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষের দীর্ঘমেয়াদি বসবাস নিশ্চিত করা। 

ব্লু ঘোস্ট মিশনের ল্যান্ডিং ভিডিও দেখতে চাইলে, নিচের লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন:

https://youtu.be/IMd2A1Wljfc?si=FfoyUUvatgwPvevU

Comments