আজ ২১ মার্চ। সূর্য আজ সরাসরি নিরক্ষরেখার উপর অবস্থান করছে। এর ফলে পৃথিবীতে আজ দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য হবে সমান। ইংরেজিতে একে বলে ইকুইনক্স (equinox), শব্দটা এসেছে ল্যাটিন থেকে, যার মানে হলো, equal night। বাংলায় একে বলে বিষুব। নিরক্ষরেখার অপর নাম হলো, বিষুবরেখা। শূন্য ডিগ্রি অক্ষাংশে এর অবস্থান।
আমরা জানি, পৃথিবী তার নিজের অক্ষের উপর প্রায় সাড়ে তেইশ ডিগ্রি কোণে হেলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। সেজন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর দুই গোলার্ধ থেকে সূর্যের আপাত অবস্থানের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এটাই হচ্ছে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের কারণ।
২১ মার্চের পর থেকে সূর্যের অবস্থান বিষুবরেখা থেকে আরো উত্তর দিকে সরে যাবে। যার ফলে উত্তর গোলার্ধে শীত শেষ হয়ে বসন্তকালের সূচনা হবে। বৃক্ষ শিখরে এখন বসন্তের আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মের পর এসেছে শরৎকাল। অস্ট্রেলিয়াতে কিছুদিন পর শুরু হবে পাতা ঝরার দিন। পাতা ঝরে পড়ার আগে পর্ণমোচী উদ্ভিদের পত্রপল্লব বর্ণিল হয়ে উঠে। ভারী সুন্দর এই দৃশ্য। এরপর দক্ষিণ গোলার্ধে শীতের সূচনা হবে। উত্তর গোলার্ধে তখন শুরু হবে গ্রীষ্মের খরতাপ। সূর্যের এই উত্তরমুখী যাত্রা শেষ হবে ২১ জুন, কর্কটক্রান্তি রেখায় এসে। সেই দিন উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য হবে সবচেয়ে বেশি, কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য হবে সবচেয়ে কম। তারপর শুরু হবে সূর্যের দক্ষিণমুখী যাত্রা।
বছরে দু'বার ইকুইনক্স হয়। দক্ষিণমুখী যাত্রায় ২১ সেপ্টেম্বর সূর্য আবার বিষুবরেখার সরাসরি উপরে চলে আসবে। তখন দিনরাত্রি আবার সমান হবে।
তারপর সূর্য আস্তে আস্তে সরে যাবে আরো দক্ষিণ দিকে। তার ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে শীতের পর সূচনা হবে বসন্তকালের। তারপর সেখানে আসবে গ্রীষ্মকাল। আর সেই সময় উত্তর গোলার্ধে শরতের পর আসবে শীতকাল। সূর্যের দক্ষিণমুখী যাত্রা শেষ হবে ২১ ডিসেম্বর, মকরক্রান্তি রেখায় এসে। সেই দিন দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য হবে সবচেয়ে বড়, কিন্তু উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য হবে সবচেয়ে ছোট। তারপর আবার শুরু হবে সূর্যের উত্তরমুখী যাত্রা।
এভাবেই অনাদিকাল ধরে সৌরকেন্দ্রিক পথ পরিক্রমায় পৃথিবীর উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যের উল্টোরথ চলছে। এর ফলে, পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তিত হয় এবং দুই গোলার্ধে বিপরীত আবহাওয়া বিরাজ করে।
Comments