সময়ের অনুক্রম

সময় বহতা নদীর মত। নদীর স্রোত যেমন উজান থেকে ভাটির দিকে বয়ে চলে, তেমনি সময়ের স্রোত অতীত থেকে বর্তমানের ভেতর দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে বয়ে যায়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের এই একমুখী স্রোতে আমরা প্রতিনিয়ত ভেসে চলেছি। সময়ের স্রোত এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে চলেছে ভবিষ্যতের দিকে। অনেকে একে বলেন, "অ্যারো অফ টাইম"। 

কিন্তু সময়কে গতিকে থামানোর কি কোন উপায় রয়েছে? অথবা সময়ের গতিকে কি কোন ভাবে পরিবর্তন করা যায়? অথবা সময়ের বিপরীতে কি যাওয়া সম্ভব? এসব উদ্ভট প্রশ্নের জবাব খোঁজার আগে, চলুন দেখে নেয়া যাক সময় ব্যাপারটি আসলে কি এবং কি ভাবে মহাবিশ্বে সময়ের সূচনা হয়েছিলো।

বিজ্ঞানীদের মতে, এখন থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে একটি মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাংয়ের (Big Bang) ফলে আমাদের চেনা মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিলো। এই মহাবিস্ফোরণের পরপরই মহাবিশ্ব অতি দ্রুত প্রসারিত হওয়া শুরু করে‌ এবং অদ্যাবধি প্রসারিত হয়েই চলেছে।  এই প্রসারণের  ফলে মহাবিশ্বে স্থানের (space) সৃষ্টি হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা এই তিনটি স্থানিক মাত্রা (spatial dimension) রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই মহাবিস্ফোরণের ফলে তিনটি স্থানিক মাত্রার পাশাপাশি আরেকটি ভিন্ন মাত্রার সূচনা হয়েছিলো। মহাবিশ্বে কোন বিন্দুকে চিহ্নিত করতে হলে, ত্রিমাত্রিক স্থানের পাশাপাশি এই চতুর্থ মাত্রাটিরও উল্লেখ করা প্রয়োজন। এই চতুর্থ মাত্রাটিই হলো সময় বা কাল (time)। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিগব্যাংয়ের আগে স্থান এবং কালের কোন অস্তিত্ব ছিল না। সবকিছুই একটি কেন্দ্রবিন্দুতে স্থির অবস্থায় ছিল। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে, সিঙ্গুলারিটি।
বিগব্যাংয়ের ফলে এই একক বিন্দু থেকেই একই সাথে স্থান এবং কালের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দৈনন্দিন জীবনে স্থান এবং কালকে আমরা আলাদা মনে করি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্থান এবং কালের যৌথ বুননেই আমাদের চেনা মহাবিশ্বের অবকাঠামো গঠিত হয়েছে। মোদ্দা কথা হলো, মহাবিশ্বে স্থান এবং কাল পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিজ্ঞানীরা এই যৌথ কাঠামোটির নাম দিয়েছেন স্পেস-টাইম। সময় হচ্ছে মহাবিশ্বের একটি অন্যতম মাত্রা, যার প্রভাবে মহাবিশ্ব সর্বদাই পরিবর্তিত হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের গতিকেই আমরা সময়ের গতি হিসেবে চিহ্নিত করেছি। আমরা আমাদের হিসেবের সুবিধার জন্য পৃথিবীর আহ্নিক এবং বার্ষিক গতির উপর ভিত্তি করে সময়কে বছর, মাস, দিন, ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড ইত্যাদি এককে ভাগ করে নিয়েছি। আমাদের দৈনন্দিন হিসেবে সময়ের গতি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে এক সেকেন্ড!

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, নদীর স্রোতের গতির মত সময়ের গতিরও তারতম্য হতে পারে। আইনস্টাইন বলেছেন, সময়ের গতি ধ্রুব নয়, এটি আপেক্ষিক। সময়ের গতি তার পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভর করে। আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বে দেখিয়েছেন, বস্তুর গতির কারণে সময়ের গতি কমে যায়। কোন বস্তু আলোর গতিতে চলতে শুরু করলে তার জন্য সময়ের গতি একেবারেই থেমে যাবে। পরবর্তীতে আইনস্টাইন‌ তাঁর আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে বলেছেন, মহাকর্ষ বলের প্রভাবেও সময়ের গতি কমে যায়। সেজন্য পৃথিবী পৃষ্ঠে সময়ের গতি পর্বত শৃঙ্গে সময়ের গতির চেয়ে কিছুটা কম হয়‌। বিভিন্ন উচ্চতায় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের তারতম্যের কারণে সময়ের গতির মাঝে এই পার্থক্যটি দেখা যায়। বস্তুর গতি অথবা মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সময়ের গতির পরিবর্তনকে বলে টাইম ডাইলেশন (time dilation) বা সময় প্রসারণ।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে টাইম ডাইলেশনের পরিমাণ‌ এতই সামান্য যে আমরা একে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। ‌আমরা অবশ্য
আমাদের চারপাশে আরো অনেক প্রাকৃতিক ঘটনাবলী দেখি বাস্তবে যেগুলো আসলে অন্যরকম। যেমন ধরুন, পৃথিবীর পৃষ্ঠ আমাদের কাছে সমতল মনে হয়, অথচ পৃথিবীর পৃষ্ঠ হলো গোলাকার। পৃথিবীকে গোলাকার দেখতে হলে, আমাদেরকে পৃথিবীর পৃষ্ঠ ছড়িয়ে মহাশূন্যে অনেক দূর উপরে উঠতে হবে। তারপর ধরুন, প্রতিদিন পূর্ব দিকে সূর্যোদয় এবং পশ্চিমে সূর্যাস্ত দেখে আমাদের কাছে মনে হতে পারে, সূর্য আমাদের পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীই তার‌ নিজের অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পুবে ক্রমাগত ঘুরছে। যার ফলে আমরা দেখছি পূব দিকে সূর্য উঠছে আর পশ্চিম দিকে অস্ত যাচ্ছে। ‌ঠিক তেমনি ভাবে প্রকৃতিতে টাইম ডাইলেশনের ব্যাপারটিও আমরা সাধারণভাবে বুঝে উঠতে পারিনা। তার কারণ হলো, সময়ের এই পার্থক্যটি হয় মাত্র ‌কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের ব্যবধানে। মাইক্রোসেকেন্ড হলো সেকেন্ডের মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ। এটি একটি অতি সামান্য পরিমাণ সময়।‌ এই সামান্য সময় টুকু পরিমাপের জন্য এটমিক ক্লকের প্রয়োজন হয়। এটমিক ক্লকের সাহায্যে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সময়ের গতির অতি সামান্য পার্থক্যটি বিজ্ঞানীরা সহজেই নিরূপণ করতে পারেন। 

টাইম ডাইলেশনের ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে‌ না পারলেও, এর বাস্তবিক প্রয়োগ দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায়শই করছি। ব্যাপারটি একটু খুলেই বলি।
আজকাল গাড়িতে পথ নির্দেশনার জন্য জিপিএস (GPS) স্যাটেলাইটের সাহায্য নেয়া হয়। এসব স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে অনেক উঁচুতে মহাশূন্যে অবস্থান করছে। এদের গতি আলোর গতির কাছাকাছি নয়, সেকেন্ডে মাত্র ৩.৯ কিলোমিটার। আলোর গতি হলো সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার। এসব স্যাটেলাইটের গতি আলোর গতির একটি অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। কিন্তু তারপরও এই গতির জন্য টাইম ডাইলেশনের ফলে  জিপিএস স্যাটেলাইটের ঘড়িগুলো প্রতিদিন ৭ মাইক্রো সেকেন্ড স্লো হয়ে যায়। কিন্তু আগেই বলেছি,  সময়ের উপর মহাকর্ষ বলেরও প্রভাব রয়েছে। পৃথিবী থেকে অনেক উচ্চতায় থাকার ফলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব জিপিএস স্যাটেলাইটের উপর কিছুটা কম হয়। এর ফলে জিপিএস স্যাটেলাইটের ঘড়িগুলো পৃথিবীর  ঘড়িগুলোর চেয়ে প্রতিদিন ৪৫ মাইক্রো সেকেন্ড বেশি গতিতে চলে। গতি এবং মহাকর্ষ এই দুই ধরনের টাইম ডাইলেশনের জন্য সামগ্রিকভাবে জিপিএসের ঘড়িগুলো পৃথিবীর ঘড়ির চেয়ে ৪৫ বিয়োগ ৭, অর্থাৎ ৩৮  মাইক্রো সেকেন্ড বেশি গতিতে চলে।  আমাদের দৈনন্দিন সময়ের হিসেবে এটি খুব বেশি কিছু নয়। তবুও এজন্য জিপিএস স্যাটেলাইটের ঘড়িগুলোকে পর্যায়ক্রমে ক্রমাঙ্কন (calibration) করা হয়। এটা না করা হলে, জিপিএস স্যাটেলাইটগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারতো না। 

এবার টাইম ডাইলেশনের উপর ভিত্তি করে দুইজন জমজ ভাইয়ের গল্প শোনা যাক। মনে করুন, জমজ ভাইয়ের একজন বাস করে সমুদ্র উপকূলে, আরেকজন বাস করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দশ হাজার ফুট উচ্চতায় একটি পাহাড়ি শহরে। ‌ পাঁচ বছর পর তাদের দেখা হলো। তখন দেখা যাবে সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারী ভাইটির বয়স পাহাড়ি শহরে বসবাসকারী ভাইটির চেয়ে সামান্য বেড়ে গেছে। ‌ তবে তাদের দুজনের বয়সের ব্যবধানটি হবে মাইক্রোসেকেন্ডে। সাদাচোখে একে বোঝার কোন উপায় নেই। ‌ 

এবার মনে করুন, দুইজন জমজ ভাইয়ের একজনকে রকেটে করে মহাশূন্যে পাঠানো হলো। আরেক ভাই পৃথিবীতেই অবস্থান করলো। ধরা যাক, মহাশূন্যে রকেটটি আলোর গতির কাছাকাছি (৯৯%) গতিতে পাঁচ বছর চলার পর পৃথিবীতে আবার ফিরে এলো। পৃথিবীতে ফিরে আসার পর দেখা যাবে ওই পাঁচ বছরে পৃথিবীতে ছত্রিশ বছরের সমান সময় পার হয়ে গেছে। এর কারণ হলো, আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব অনুসারে প্রচন্ড গতির কারণে রকেটের ভেতর সময়ের গতি পৃথিবীর সময়ের গতির তুলনায় অনেক কমে গিয়েছিলো। সেজন্য এক ভাইয়ের কাছে রকেটের ভেতর যে সময়কে মনে হয়েছে পাঁচ বছর, অন্য ভাইটির কাছে সে সময় পৃথিবীতে কেটেছে পুরো ছত্রিশ বছর।‌ ভ্রমণ শেষে মহাশূন্যচারী ভাইটি পৃথিবীতে অবস্থানকারী তার জমজ ভাইটির চেয়ে বয়সে একত্রিশ বছর ছোট হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সে ফিরে আসবে একত্রিশ বছর পরের ভবিষ্যতে।  অনেকের কাছে একে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর চেয়েও বিস্ময়কর। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আলোর গতির কাছাকাছি গতি অর্জন করতে পারলে টাইম ডাইলেশনের ফলে এই বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটবে।‌ 

সময় আসলে এক ধরনের বিভ্রম (illusion)। গতি এবং মহাকর্ষের বিবেচনায় একেক দর্শকের কাছে‌ সময়ের গতি একেক রকম মনে হতে পারে। কিন্তু সব দর্শকই মনে করে তার সময়ই ধ্রুব। আসলে সময়ের গতি ধ্রুব নয়। সময়ের গতি আপেক্ষিক।

সময়ের গতি-প্রকৃতি মানুষের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। মহাবিশ্বে সময়ের স্বরূপ উদঘাটন করার জন্য বিজ্ঞানীরা থার্মোডায়নামিক্স বা তাপগতিবিদ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।‌ তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে, মহাবিশ্বে বিশৃঙ্খলা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।‌ বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই বিশৃঙ্খলার নাম হলো, এনট্রপি। মহাবিশ্বের সূচনায় এনট্রপি ছিল কম এবং ক্রমেই এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এনট্রপি  বাড়ার ফলেই  "অ্যারো অফ টাইম" ক্রমেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মহাবিশ্বে কম এনট্রপি মানে হলো অতীত এবং বেশি এনট্রপি মানে হলো ভবিষ্যত। এই দুইয়ের মাঝে আমরা অবস্থান করি, যার নাম আমরা দিয়েছি বর্তমান। ‌কিন্তু সময়ের অনুক্রমে বর্তমানকে ধরে রাখা যায় না,‌ অথবা অতীতে ফেরা যায় না। সময়ের স্রোত এগিয়ে  যায় শুধু ভবিষ্যতের দিকে। কারন প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে মহাবিশ্বের এনট্রপি ক্রমেই বাড়ছে। 

সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন। তাঁরা একটি ৫০ ন্যানোমিটার প্রস্হের সিলভার নাইট্রাইড মেমব্রেনে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু করে কম্পন সৃষ্টি করে একে একটি এটমিক ক্লকে রূপান্তরিত করেছেন।‌ তারপর তাঁরা দেখেছেন, যতই নিখুঁতভাবে এই এটমিক ক্লকের কম্পন দিয়ে সময়ের পরিমাপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, ততই ঐ সিস্টেমের এনট্রপি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এনট্রপিই সময়ের মূল বিষয় কিনা সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। 

আরেকদল বিজ্ঞানী স্থান-কালের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁরা স্থান-কালকে একটি কোয়ান্টাম ক্ষেত্র (Quantum field) হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এই কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে স্থান এবং কালের ক্ষুদ্রতম একক রয়েছে। স্থানের ক্ষুদ্রতম দৈর্ঘ্য হলো প্ল্যাঙ্ক লেংথ (১.৬ x ১০^-৩৫ মিটার)। এর নিচে স্থানের কোন অস্তিত্ব নেই। তেমনি কাল বা সময়ের ক্ষুদ্রতম দৈর্ঘ্য হলো প্ল্যাঙ্ক টাইম (১০^-৪৩ সেকেন্ড)। এর কমে সময়ের কোন অস্তিত্ব নেই। এই অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থান-কালগুলো লুপ বা ফাঁসের মত পরস্পরের সাথে জড়িয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, একে বলা হয় স্পিন নেটওয়ার্ক। তারপর এই নেটওয়ার্কগুলো পরস্পরের সাথে  যুক্ত হয়ে তৈরি করেছে স্পিন ফোম।  এই তত্ত্বে এভাবেই স্থান-কালের কোয়ান্টাম ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। এই তত্ত্বের নাম হলো,
লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি বা এল কিউ জি। স্থান এবং কালের ক্ষুদ্রতম একক কখনোই প্ল্যাঙ্ক লেংথ অথবা প্ল্যাঙ্ক টাইমকে অতিক্রম করতে পারে না। কারণ এটিই হলো স্থান এবং কালের সর্বনিম্ন সীমা। এর নিচে স্থান এবং কালের কোন অস্তিত্ব নেই। মোদ্দা কথা হলো, এভাবেই লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটিতে বিজ্ঞানীরা স্থান-কালের মৌলিক গঠনের একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে এর সপক্ষে কোন পরীক্ষা মূলক প্রমাণ নেই, এটি এখনো গাণিতিক সমীকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। 

আসলে মানুষের কাছে সময়ের মৌলিক চরিত্রটি এখনো স্পষ্ট নয়। অনেকে মনে করেন মহাবিশ্বে অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ  একই সাথে বিরাজমান। একে বলে  ব্লক ইউনিভার্স থিওরি। এই মতবাদ অনুসারে, সময়ের বিভিন্নতার মাঝে অন্তর্নিহিত কোন পার্থক্য নেই। শুধুমাত্র  ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতার জন্য আমরা শুধু বর্তমানকেই দেখতে পাই। 

সময় প্রসঙ্গে আলবার্ট আইনস্টাইনের লেখা একটি চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করছি। আইনস্টাইন তাঁর এক প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে চিঠিটি লিখেছিলেন: 

"Now he has again preceded me a little in parting from this strange world. This has no importance. For people like us who believe in physics, the separation between past, present and future has only the importance of an admittedly tenacious illusion."

© তানভীর হোসেন

Comments