রসায়নে নোবেল বিজয়ী আহমেদ হাসান জিওয়ালী ছিলেন রসায়নের একটি বিশেষ শাখার উদ্ভাবক। একে বলা হয়, ফেমটোকেমিস্ট্রি।
জন্মসূত্রে আহমেদ হাসান ছিলেন মিসরীয়। ১৯৪৬ সালে মিশরের এক অতি সাধারণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনায় মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে অনার্স এবং মাস্টার্স করার পর তিনি বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। তারপর কয়েক বছর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে গবেষণা করার পর ফ্যাকাল্টি হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি স্থায়ীভাবে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনায় বসবাস করতেন। ক্যালটেক থেকেই তিনি ফেমটোকেমিস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
বিজ্ঞানীরা জানেন, বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় পদার্থের আণবিক গঠনের পরিবর্তন ঘটে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। সময়ের হিসেবে এসব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে ফেমটো সেকেন্ডের ব্যবধানে। এক ফেমটো সেকেন্ড (১০^-১৫) হলো এক ন্যানোসেকেন্ডের (১০^-৯) এক মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ মাত্র। এই অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি-প্রকৃতিকে অনুসরণ করা একটি দুঃসাধ্য কাজ। আহমেদ হাসান জিওয়ালী এই দুঃসাধ্য কাজটি করেছিলেন তাঁর আবিষ্কৃত ফেমটো সেকেন্ড স্পেক্ট্রোস্কপির মাধ্যমে। এর জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন আল্ট্রা ফাস্ট লেজার রশ্মি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ফেমটো সেকেন্ডের ব্যবধানে চিহ্নিত করা সম্ভব। তাঁর এই আবিষ্কারটি ফলে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় পরমাণুর স্থানান্তর এবং নুতন কেমিক্যাল বন্ড গঠনের প্রক্রিয়া
সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা অনেক নতুন তথ্য পেয়েছেন। এটি ছিল একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই আবিষ্কারটির জন্যই তাঁকে ১৯৯৯ সালে এককভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর আবিষ্কারটি সুদুরপ্রসারি সম্ভাবনা রয়েছে।
একই বছর তাঁর মাতৃভূমি মিশর তাঁকে সে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, গ্র্যান্ড কলার অফ দি নাইলে ভূষিত করে। ২০০৬ সালে তাঁকে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ওয়ার্ল্ড এওয়ার্ড অফ সাইন্স প্রদান করা হয়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একজন বিশেষ দূত হিসেবে তিনি মিশর, জর্ডান, লেবানন, তুরস্ক প্রভৃতি মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে সফর করে সেসব দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করেছিলেন।
২০১৬ সালের ২ আগস্ট ৭০ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
Comments