স্মরণীয় সূর্যগ্রহণ

আজ ২৯ মে। বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯১৯ সালের এই দিনে একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। সেই সূর্যগ্রহণের সময় প্রখ্যাত ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্যার আর্থার এডিংটন একটি সফল পরীক্ষার মাধ্যমে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সঠিক বলে প্রমাণ করেছিলেন। 

১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বে বলেছিলেন, বস্তুর ভরের কারণে এর চারপাশের স্থান-কালের মাঝে এক ধরনের বক্রতা সৃষ্টি হয়। যে বস্তুর ভর যত বেশি হবে তার চারপাশে স্থান-কালের মধ্যে বক্রতার পরিমাণ হবে তত বেশি।‌ এই বক্রতাকেই আমরা মহাকর্ষ বল হিসেবে দেখি। সপ্তদশ শতাব্দীতে স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষ বলের যে চিরায়ত ধারণা দিয়েছিলেন তা নিয়ে আগে কেউ প্রশ্ন তুলেনি। কিন্তু আইনস্টাইন মহাকর্ষ নিয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন কথা শোনালেন। তাঁর মতে মহাকর্ষ মূলত একটি জ্যামিতিক ব্যাপার। বলাই বাহুল্য, আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্বটি ছিল একেবারেই যুগান্তকারী এবং চাঞ্চল্যকর।  

কিন্তু বিজ্ঞানে শুধু তত্ত্ব দিলেই চলবে না। তত্ত্ব প্রমাণ করা চাই। আর এই কাজটাই  করেছিলেন স্যার আর্থার এডিংটন। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশিত হওয়ার চার বছর পর, ১৯১৯ সালের ২৯ মে একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। সেদিনের পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগটিকেই তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন। 

এই পরীক্ষার জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন ঐ সময় সূর্যের কাছাকাছি কৌণিক অবস্থানে থাকা একটি নক্ষত্রকে। পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময়, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল এবং ব্রাজিলের একটি অঞ্চল থেকে যুগপৎভাবে নক্ষত্রটির ছবি তোলা হলো। দিনের বেলায় সূর্যের অবস্থানের জন্য এই নক্ষত্রটিকে দেখা সম্ভব ছিল না। কিন্তু সূর্য গ্রহণের সময় নক্ষত্রটি দৃশ্যমান হয়ে উঠলো। নক্ষত্রটির দৃশ্যমান আলোক রশ্মি বিশ্লেষণ করে দেখা গেল নক্ষত্রটি তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে ১.৭৫ আর্ক সেকেন্ড সরে এসেছে। আর্থার এডিংটন বুঝতে পারলেন, সূর্যের ভরের কারণে তার চারপাশের স্থান-কাল কিছুটা বেঁকে গেছে। তার ফলে ওই বাঁকা পথ অতিক্রম করতে গিয়ে নক্ষত্রটির আলোও কিছুটা বেঁকে গিয়েছে। তিনি হিসেব করে দেখলেন, নক্ষত্রের আলোর এই বক্রতার পরিমাণ আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সমীকরণের সাথে মিলে যাচ্ছে। এটি ছিল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের স্বপক্ষে প্রথম পরীক্ষামূলক প্রমাণ। এই সফল পরীক্ষার ফলে আইনস্টাইন রাতারাতি হয়ে উঠলেন বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা বিজ্ঞানী। ‌এরপর অবশ্য আরো নানা  পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নির্ভুল ভাবে প্রমানিত হয়েছে। 

স্থান-কালের বক্রতার উপর নির্ভর করে "গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং" নামে  জ্যোতির্বিজ্ঞানে পরবর্তীতে একটি নুতন পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের গঠন, বিস্তার এবং বিশেষত ডার্ক ম্যাটার সম্বন্ধে বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন। 
© তানভীর হোসেন

Comments