থিওরি অফ এভরিথিং

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে সারা পৃথিবীতে অসামান্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন। এর কারণ হলো, আইনস্টাইন তাঁর আবিষ্কৃত আপেক্ষিকতার বিশেষ এবং সাধারন তত্ত্বে সম্পূর্ণ এক নতুন দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক নিয়মাবলীর ব্যাখা দিয়েছিলেন। এর ফলে বিশ্ব প্রকৃতি সম্বন্ধে মানুষের সনাতনী ধারণা একেবারেই পাল্টে যায়।

১৯০৫ সালে, আইনস্টাইন তাঁর  আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বে গতির সাথে সময়ের একটি সম্পর্ক তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছেন, সময় ব্যাপারটি ধ্রুব নয়, এটি আপেক্ষিক। বস্তুর গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে সময়ের গতি শ্লথ হয়ে যায়। কোন বস্তু যদি আলোর গতিতে চলে তাহলে তার জন্য সময়ের গতি একেবারেই থেমে যাবে। আইনস্টাইন তাত্ত্বিকভাবে দেখিয়েছেন, আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিতে কোন বস্তু চলতে পারে না। আলোর গতিতে চললে কোন বস্তুর ভর হয়ে যাবে অসীম, কিন্তু তার দৈর্ঘ্য হয়ে যাবে শুন্য।  আলোর গতিই হলো বস্তুর সর্বোচ্চ গতিসীমা। একে অতিক্রম করা কোন বস্তুর পক্ষে সম্ভব নয়।  আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং উচ্চতা এই তিনটি স্থানিক মাত্রার পাশাপাশি সময়কেও একটি মাত্রা হিসেবে ধরা হয়েছে। স্থান এবং সময়ের যৌথ বুননেই মহাবিশ্বের অবকাঠামো গঠিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন, স্পেস-টাইম বা স্থান-কাল। এটি একটি অভিন্ন সত্তা।

আইনস্টাইন আরো বলেছেন, বস্তুর ভর এবং শক্তি পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।  তাঁর বিখ্যাত ভর -শক্তির সমীকরণে (E =mc2)  তিনি এটি দেখিয়েছেন।  এই সমীকরণ অনুযায়ী সামান্য পরিমাণ ভরকে বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক শক্তিতে সরাসরি রূপান্তরিত করা সম্ভব। ভর এবং শক্তি মূলত একই মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ। স্থান-কালের মত ভর -শক্তিও একটি অভিন্ন সত্তা।

এর দশ বছর পর, ১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে বলেছেন, বস্তুর উপস্থিতিতে স্থান-কালের চাদরে এক ধরনের বক্রতার সৃষ্টি হয়। স্থান-কালের বুননের মাঝে এই বক্রতাটিই হলো মহাকর্ষ বলের উৎস। যে বস্তুর ভর যত বেশি হবে তার চারপাশের স্থান-কালের চাদরে বক্রতার পরিমাণও তত বেশি হবে। সেজন্য তার মহাকর্ষ বলও হবে তত বেশি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সূর্যের উপস্থিতিতে এর চারপাশে স্থান-কালের বুননের মাঝে যে বক্রতাটি সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে অনুসরণ করেই পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে। এভাবেই তিনি নিউটনের আবিষ্কৃত মহাকর্ষ বলের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেজন্য  আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বকে বলা হয়, আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্ব। তাঁর মতে, মহাকর্ষ হলো স্থান-কালের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এটি একটি জ্যামিতিক ব্যাপার। বলাই বাহুল্য, এ রকম কালজয়ী ধারণা আইনস্টাইনের আগে আর কারো মাথায় আসেনি।

আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী, বিশাল ভরের কোন নক্ষত্রের প্রবল মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এর চারপাশে স্থান-কালের বক্রতাটি অসীম আকার ধারণ করতে পারে। তখন নক্ষত্রটির সর্বগ্রাসী মহাকর্ষ বলের কারণে এর ভেতর থেকে কোন আলোকরশ্মি বের হতে পারে না।‌ নক্ষত্রটি হয়ে যায় সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এর ভেতর সময়ের প্রবাহও তখন থেমে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি। বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা জানেন, মহাশূন্যে অসংখ্য ব্ল্যাকহোলের ভেতর এই অবস্থা বিরাজ করছে। আইনস্টাইন আরো বলেছেন, মহাকর্ষ বল তরঙ্গের আকারে স্থান-কালের চাদরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। একে বলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। কিন্তু অন্যান্য প্রাকৃতিক বলের তুলনায় মহাকর্ষ বল অত্যন্ত ক্ষীণ। সেজন্য মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন‌ কাজ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

গত একশ বছরে আইনস্টাইনের আবিষ্কৃত বিশেষ এবং সাধারন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ভুলভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আপেক্ষিকতার দুটো তত্ত্বই পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত সফল তত্ত্ব হিসেবে বিবেচিত। গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, ব্ল্যাকহোল সহ বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুর গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করার জন্য আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু তারপরও আইনস্টাইন নিজে তাঁর এই সাফল্যে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট ছিলেন না। প্রাকৃতিক নিয়মাবলীর অন্তর্নিহিত রহস্য উদঘাটনে তিনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে চেয়েছিলেন। এই গবেষণার কাজে তিনি তাঁর জীবনের শেষ তিনটি দশক ব্যয় করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই কাজটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি।

আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর, তাঁর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা কাগজপত্র সহ একটি আগোছালো ডেস্কের ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো। ছবির নিচে ক্যাপশন ছিলো, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর অসমাপ্ত  কাজের পান্ডুলিপি। সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহল হওয়া স্বাভাবিক, কি ছিল তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজ?

আপেক্ষিকতার দুটো তত্ত্বের সাফল্যের পর, আইনস্টাইন চেয়েছিলেন মহাকর্ষ এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় বল, এ দুটো মৌলিক প্রাকৃতিক বলের সমন্বয়ে একটি অভিন্ন ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি বা একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের কাঠামো তৈরি করতে। তিনি মনে করতেন, প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সকল কার্যপ্রণালী একই সূত্রে গাঁথা। সুতরাং একটি সমীকরণের  মাধ্যমেই সেটা প্রকাশ করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটি এত সহজ নয়। মহাকর্ষ এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় বল, এ দুয়ের মাঝে যথেষ্ট বাহ্যিক পার্থক্য রয়েছে। আমরা জানি, মহাকর্ষ বল সবসময়ই আকর্ষণ ধর্মী। কিন্তু তড়িৎ চৌম্বকীয় বল আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ উভয় ধর্মী হতে পারে। তাছাড়া তড়িৎ চৌম্বকীয় বল, মহাকর্ষ বলের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। এ দুয়ের মাঝে সমন্বয় করা একটি দুরূহ ব্যাপার। মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন এই কাজটি করে যেতে পারেন নি। সেজন্য একে বলা হয়, আইনস্টাইনের অসমাপ্ত কাজ।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁর আগে, ডেনিশ বিজ্ঞানী হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেড দেখিয়েছেন, বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে এর চারপাশে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। তারপর মাইকেল ফ্যারাডে দেখিয়েছেন,  চৌম্বকীয় ক্ষেত্র থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এর মোদ্দা কথা হলো, বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দুটোই আসলে একই বলের ভিন্ন ভিন্ন বহিঃপ্রকাশ। একে বলা হয়, তড়িৎ চৌম্বকীয় বল বা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফোর্স। এটি একটি মৌলিক প্রাকৃতিক বল। মাইকেল ফ্যারাডে অবশ্য এই প্রাকৃতিক বলের কোন গাণিতিক ব্যাখ্যা দেন নাই। তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের বিশদ গাণিতিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন একজন স্কটিশ পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর নাম জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল। গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে তিনি তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁর এই গাণিতিক সমীকরণগুলো, ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ হিসেবে বিজ্ঞানীদের কাছে সুপরিচিত। দৃশ্যমান আলোও যে এক ধরনের তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ সেটাও ম্যাক্সওয়েল তাঁর সমীকরণে ইঙ্গিত করেছিলেন।

আইনস্টাইন বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুতে আলোর তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ নিয়েও কাজ করেছিলেন। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে তিনি দেখিয়েছেন, আলোক তরঙ্গ এক ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। এদের নাম হলো ফোটন কণা। এই কণাগুলো যখন কোন ধাতব পদার্থে আঘাত হানে, তখন ফোটনের সমস্ত শক্তি ওই পদার্থের ইলেকট্রনের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। তার ফলে ইলেকট্রন কণাগুলো স্থানচ্যুত হয়। একে বলে ফটো-ইলেক্ট্রিক এফেক্ট। তিনি প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের সাহায্যে এই শক্তির পরিমাণ নির্ণয় করেছিলেন। এখানে বলে রাখি, আপেক্ষিকতার তত্ত্বের পাশাপাশি বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নামে পদার্থবিজ্ঞানের আরেকটি শাখার উদ্ভব হয়েছিলো। এর প্রাথমিক ধারণাটির জন্ম দিয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। আইনস্টাইনের মতো তিনিও  ছিলেন জার্মান। কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, এই শক্তির বিকিরণটি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে হয় না। এটি হয় খন্ডিতভাবে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তির আকারে। এর নাম তিনি দিয়েছিলেন "কোয়ান্টা"।  তিনি এই শক্তির পরিমাপ নির্ণয় করেছিলেন একটি ধ্রুবকের সাহায্য, যাকে বলা হয় প্ল্যাঙ্কস কনস্ট্যান্ট বা প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক। বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের হাত ধরেই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূচনা হয়েছিলো। এজন্য ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ককে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনক বলা হয়। তারপর আইনস্টাইন দেখিয়েছেন, আলোকরশ্মির ক্ষেত্রেও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম কাজ করে।  প্রসঙ্গত বলে রাখি, ফটো-ইলেক্ট্রিক এফেক্ট আবিষ্কার করার জন্যই ১৯২১ সালে আইনস্টাইনকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছিলো। তাঁর আবিষ্কৃত আপেক্ষিকতার তত্ত্বের জন্য নয়।

পরবর্তীতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে।  বস্তুকণাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতের নিয়ামক হলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন,  কোয়ান্টাম জগতের নিয়ম কানুন গুলো বড়ই অদ্ভুত। একটি বস্তুকণা একই সাথে তরঙ্গ এবং কণা দুই রূপেই থাকতে পারে। সেজন্য নিশ্চিতভাবে একই সাথে বস্তুকণার অবস্থান এবং ভরবেগ নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায় না। গত শতাব্দীতে অনেক মেধাবী বিজ্ঞানী কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করে এর বিভিন্ন নিয়মাবলী আবিষ্কার করেছেন। এদের মধ্যে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, আরউন শ্রোডিঙ্গার, নীলস বোর, পল ডিরাক,লুই দ্য ব্রগলী, উলফগ্যাং পউলি, এনরিকো ফার্মি, রিচার্ড ফাইনম্যান, প্রমূখ বিজ্ঞানীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মগুলো আপেক্ষিকতার নিয়মের সাথে খাপ খায় না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোয়ান্টাম জগতের নিয়ম-কানুন গুলো বড়ই আলাদা। দৃশ্যমান জগতের সাথে এর কোন মিল নেই। অবস্থা দৃষ্টে মনে হতে পারে, মহাবিশ্বের বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র এই দুই জগত দুটো ভিন্ন নিয়মে চলছে। এজন্য আইনস্টাইন নিজেও কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন।

আইনস্টাইনের পরবর্তী যুগের বিজ্ঞানীরা প্রকৃতিতে মহাকর্ষ এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় বল ছাড়াও আরও দুই ধরনের মৌলিক বলের সন্ধান পেয়েছেন। এই দুটো প্রাকৃতিক বল কাজ করে বস্তুকণাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতে। এদের নাম হলো স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স এবং উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই বলগুলো কাজ করে পরমাণুর কেন্দ্র নিউক্লিয়াসের ভেতর। পদার্থের গঠনে এই দুটো মৌলিক বলের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।  স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতরে প্রোটন এবং নিউট্রন কণাগুলোকে একত্রিত করে ধরে রাখে। এটি একটি আকর্ষণ ধর্মী বল। অন্যদিকে উইক নিউক্লিয়ার ফোর্সের প্রভাবে একটি প্রোটন কণা একটি নিউট্রন কণায় অথবা একটি নিউট্রন কণা একটি প্রোটন কণায় রূপান্তরিত হতে পারে। এর ফলে‌ পরমাণুর  নিউক্লিয়াসে তেজস্ক্রিয়তার উদ্ভব হয়।   

বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির রহস্য ভেদ করতে চান। তাঁরা চান বস্তুর স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে। গত পঞ্চাশ বছরে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নানান তত্ত্ব ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা পদার্থের মৌলিক রূপটি কিছুটা হলেও এখন বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর ভিত্তি করে বস্তুকণার একটি স্ট্যান্ডার্ড মডেল দিয়েছেন। এই মডেল দিয়ে বস্তুকণার মূল চরিত্র, তথা পদার্থের স্বরূপ অনেকটাই ব্যাখ্যা করা যায় এবং মহাকর্ষ বাদে অন্য তিনটি প্রাকৃতিক বলকে একীভূত করা যায়। এখানে বলে রাখি, উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স‌ এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সকে একটি অভিন্ন বল হিসেবে প্রকাশিত করার জন্য তিনজন বিজ্ঞানীকে ১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এরা হলেন, প্রফেসর আব্দুস সালাম, স্টিভেন ওয়েনবার্গ এবং শেলডন গ্ল্যাসো।‌
কিন্তু সমস্যা হলো, স্ট্যান্ডার্ড মডেলে বস্তুকণার চরিত্র ব্যাখ্যা করা গেলেও, মহাকর্ষ বলের কোন যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দেয়া যায় না। এর জন্য আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের  আশ্রয় নিতে হয়। সোজা কথায় বলতে হয়, প্রকৃতির সকল নিয়ম ব্যাখ্যা করার জন্য বস্তুকণার স্ট্যান্ডার্ড মডেলই যথেষ্ট নয়।  এর বাইরেও অজানা অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে।

এ যুগের বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে এক রহস্যময় গুপ্ত শক্তির সন্ধান পেয়েছেন। এর নাম তাঁরা দিয়েছেন ডার্ক-এনার্জি। এই শক্তির প্রভাবে গ্যালাক্সি গুলোর পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যাবার গতি ক্রমেই ত্বরান্বিত হচ্ছে। এক কথায় বলা চলে, মহাকর্ষের বিপরীতে কাজ করছে ডার্ক এনার্জি। এর উৎস সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, এটি মহাশূন্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ডার্ক এনার্জির পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে এক ধরনের গুপ্ত পদার্থের সন্ধানও পেয়েছেন। এর নাম হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার। এই ডার্ক ম্যাটারকে দেখা যায় না, কিন্তু এর মহাকর্ষ বল কাজ করে সকল দৃশ্যমান পদার্থের উপর। গ্যালাক্সি গুলোর গঠনে ডার্ক ম্যাটারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ডার্ক ম্যাটার না থাকলে গ্যালাক্সিগুলো গঠিত হতে পারতো না। তাঁরা হিসেব করে বের করেছেন, ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি দিয়েই সম্মিলিতভাবে মহাবিশ্বের শতকরা ৯৫ ভাগ পদার্থ ও শক্তি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এ সম্বন্ধে মানুষ তেমন কিছুই জানে না। মানুষের যাবতীয় জ্ঞান এখনো সীমাবদ্ধ রয়েছে শতকরা মাত্র ৫ ভাগ দৃশ্যমান পদার্থ ও শক্তিকে ঘিরে। বাকিটা এখনো রয়েছে অজানা।

মহাবিশ্বের যাবতীয় রহস্য উদঘাটনে, বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা এমন একটি সম্পূর্ণ তত্ত্বের সন্ধান করছেন, যা দিয়ে প্রকৃতিতে বিদ্যমান চারটি মৌলিক বলকে একত্রিত করা যাবে। তার পাশাপাশি এই তত্ত্ব দিয়ে মহাবিশ্বের উৎপত্তি সহ ছোট-বড় সমস্ত প্রাকৃতিক নিয়মকে ব্যাখ্যা করা যাবে এবং একটিমাত্র সমীকরণের মাধ্যমেই সেটাকে প্রকাশ করা যাবে। অনেকে একে বলেন, "থিওরি অফ এভরিথিং" বা সব কিছুর তত্ত্ব। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই তত্ত্বটির মাধ্যমেই আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব হবে। তাঁদের মতে, মহাবিশ্বের বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র এ দুটো জগত দুটো ভিন্ন নিয়মে চলতে পারে না। এই দুয়ের মাঝে নিশ্চয়ই কোনো যোগসূত্র রয়েছে। তাঁরা আরো মনে করেন, এই সমন্বয়কারী তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত হলে ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি সহ মহাবিশ্বের যাবতীয় অজানা রহস্যের জট খুলবে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, থিওরি অফ এভরিথিং  বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীদের কাছে সবচাইতে আরাধ্য তত্ত্ব।

প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরেই বিজ্ঞানীরা থিওরি অফ এভরিথিং এর সন্ধান করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে প্রচুর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, বই লেখা হয়েছে, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম হয়েছে।‌ অথচ থিওরি অফ এভরিথিং এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে এমন একটি অনবদ্য তত্ত্ব রয়েছে, যাকে অনেক বিজ্ঞানী থিওরি অফ এভরিথিং হবার যোগ্য বলে মনে করেন। এর নাম হলো, স্ট্রিং থিওরি।

বস্তুকণার স্ট্যান্ডার্ড মডেলে পদার্থের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু মূলত দুই ধরনের পদার্থ কণা দিয়ে গঠিত, এদেরকে বলে কোয়ার্ক এবং লেপ্টন। কিন্তু স্ট্রিং থিওরির প্রবক্তা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটাই শেষ কথা নয়। কোয়ার্ক এবং লেপ্টনের ভেতরে রয়েছে এক রহস্যময় জগত। যে জগতে রয়েছে এক ধরনের অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একমাত্রিক কম্পমান স্ট্রিং। পরমাণুর কেন্দ্রের নিউক্লিয়াসের চেয়েও এরা লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গুণ ছোট। মূলত এরাই হলো পদার্থের ক্ষুদ্রতম মৌলিক একক। এদের দৈর্ঘ্য হলো, ১.৬ x ১০^-৩৫ মিটার। এই দৈর্ঘ্যকে বলা হয় প্ল্যাঙ্ক লেংথ। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। এই দৈর্ঘ্যটির নিচে বস্তুকণার স্বরূপ নির্ধারণ করা যায় না। বস্তুকণার এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগত চলে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম অনুসারে। পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যান্য নিয়ম এখানে খাটে না।

তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে, গিটারের তারের মতই এই স্ট্রিং গুলোর কম্পনের ফলে এদের ভেতর এক ধরনের অনুনাদ বা রেজোন্যান্সের সৃষ্টি হয়‌। এই অনুনাদের বহিঃপ্রকাশকে আমরা দেখি বস্তুকণা হিসেবে। স্ট্রিংয়ের কম্পনের তারতম্যের ফলে বস্তুকণার বৈশিষ্ট্যও বিভিন্ন ধরনের হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, স্ট্রিংয়ের ভেতরে এক ধরনের কম্পনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে লেপ্টন, আবার অন্য ধরনের কম্পন থেকে  উদ্ভব হয়েছে কোয়ার্ক। অর্থাৎ লেপ্টন এবং কোয়ার্কের ভৌত ধর্ম আলাদা হলেও এদের মৌলিক গঠন হলো অভিন্ন।

স্ট্রিংয়ের চরিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা উচ্চ মাত্রার গাণিতিক সমীকরণের সাহায্য নিয়েছেন। এসব সমীকরণে তারা দেখিয়েছেন, মোট এগারোটি ডাইমেনশন বা মাত্রা রয়েছে মহাবিশ্বে। তবে এসব উচ্চতর মাত্রা গুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং কোঁকড়ানো ও প্যাঁচানো অবস্থায় থাকে, সেজন্য আমরা এদের কখনোই দেখতে পাই না। এদেরকে বলা হয়, হাইপার ডাইমেনশন। এই উচ্চতর মাত্রাগুলো রয়েছে আমাদের সম্পূর্ণ অগোচরে।

স্ট্রিং থিওরির বিশেষত্ব হলো, এটিই পদার্থবিজ্ঞানের একমাত্র তত্ত্ব যা দিয়ে মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুকণার চরিত্র ব্যাখ্যা করা যায় এবং মহাকর্ষ সহ প্রকৃতিতে বিদ্যমান চারটি মৌলিক বলকে একীভূত করা যায়। স্ট্রিং থিওরিতে একটি কোয়ান্টাম কণার কথা বলা হয়েছে, যার ভর শুন্য কিন্তু স্পিন হলো দুই, অর্থাৎ ফোটনের দ্বিগুণ। এই ভর শূন্য কণাটির নাম হলো, গ্র্যাভিটন। আলোর ফোটন কণার মতই এটিও একটি বল বহনকারী কণা। স্ট্রিং থিওরি মতে, গ্র্যাভিটন কণাই  হলো মহাকর্ষ বলের উৎস। মজার ব্যাপার হলো, বস্তুকণার আচরণের ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি স্ট্রিং থিওরী স্থান-কালের গঠনের ব্যাখ্যাও দিতে পারে। স্ট্রিং থিওরী গাণিতিকভাবেও  সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সমীকরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এজন্য স্ট্রিং থিওরিকে নিয়ে এর প্রবক্তা  বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত আশাবাদী।

স্ট্রিং থিওরীর একজন অন্যতম প্রবক্তা হলেন মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক মিচিও কাকু। জনপ্রিয় বিজ্ঞানের একজন সফল লেখক হিসেবেও তাঁর বিশেষ সুনাম রয়েছে। তিনি মনে করেন, স্ট্রিংয়ের সম্মিলিত ঐকতানে সুর ও সংগীতের যে মূর্ছনা সৃষ্টি হয়েছে সেটাই বিমুর্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে পদার্থের সকল অণু-পরমাণুতে। তাঁর মতে, পুরো মহাবিশ্বটাই যেন কম্পমান স্ট্রিংয়ের একটি বিশাল সিম্ফোনি।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞানের সকল তত্ত্বকেই পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হয়। এটি না হলে কোন তত্ত্বই সর্বজন স্বীকৃত হয়না।  স্ট্রিং থিওরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এর স্বপক্ষে পরীক্ষামূলক অথবা পর্যবেক্ষণগত কোন প্রমাণ নেই। স্ট্রিংয়ের আকৃতি এতই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে বর্তমান যুগের অতি উচ্চশক্তির পারমাণু বিধ্বংসী পরীক্ষায়ও স্ট্রিংয়ের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্ট্রিংয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার মতো শক্তিশালী পার্টিকেল এক্সেলেটর এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে কিনা সেই নিশ্চয়তাও বর্তমানে নেই। সেজন্য অনেক বিজ্ঞানী একে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের চেয়ে দর্শন হিসেবেই বিবেচনা করতে চান।  এছাড়া স্ট্রিং থিওরিতে প্রস্তাবিত উচ্চতর মাত্রা নিয়েও অনেক বিজ্ঞানীর মনে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতার জন্য স্ট্রিং থিওরিকে প্রমাণ করা হবে দুঃসাধ্য।

কিছু তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী আছেন যারা স্ট্রিং থিওরি প্রমাণের আশায় বসে না থেকে অন্যভাবে সমস্যাটির সমাধান করতে চাচ্ছেন। তাদের পছন্দের থিওরি হলো, লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি বা এল কিউ জি। এটিও স্ট্রিং থিওরির চেয়ে কম কৌতূহল উদ্দীপক নয়। তবে স্ট্রিং থিওরির সাথে এল কিউ জির একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এটি স্ট্রিং থিওরির মত পটভূমি নির্ভর নয়। আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের মত পটভূমি ছাড়াই এর ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব।

আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের সমীকরণের উপর ভিত্তি করে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী অভয় আশটেকার ও অমিতাভ সেন এল কিউ জির গাণিতিক মডেলের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এই তত্ত্বে স্থান-কালকে একটি কোয়ান্টাম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে স্থান এবং কালের ক্ষুদ্রতম একক রয়েছে। স্থানের ক্ষুদ্রতম দৈর্ঘ্য হলো প্ল্যাঙ্ক লেংথ (১.৬ x ১০^-৩৫ মিটার)। এর নিচে স্থানের কোন অস্তিত্ব নেই। তেমনি সময়ের ক্ষুদ্রতম দৈর্ঘ্য হলো প্ল্যাঙ্ক টাইম (১০^-৪৩ সেকেন্ড) । এর কমে সময়ের বা কালের কোন অস্তিত্ব নেই। এই অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থান-কালগুলো লুপ বা ফাঁসের মত পরস্পরের সাথে জড়িয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, একে বলা হয় স্পিন নেটওয়ার্ক। তারপর এই স্পিন নেটওয়ার্কগুলো পরস্পরের সাথে  যুক্ত হয়ে তৈরি করেছে স্পিন ফোম। লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি তত্ত্বে এভাবেই স্থান-কালের কোয়ান্টাম ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। এই তত্ত্ব অনুসারে, স্থান এবং কালের ক্ষুদ্রতম একক কখনোই প্ল্যাঙ্ক লেংথ অথবা প্ল্যাঙ্ক টাইমকে অতিক্রম করতে পারে না। কারণ এটিই হলো স্থান এবং কালের সর্বনিম্ন সীমা। এর নিচে স্থান এবং কালের কোন অস্তিত্ব নেই। মোদ্দা কথা হলো, এভাবেই লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটিতে বিজ্ঞানীরা স্থান-কালের মৌলিক গঠনের একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অবশ্য একে ঠিক থিওরি অফ এভরিথিং বলা চলে না।  স্ট্রিং থিওরির মতো এল কিউ জির স্বপক্ষেও কোন পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। এটিও গাণিতিক সমীকরণের মধ্যেই এখনো সীমাবদ্ধ রয়েছে। এল কিউ জির প্রবক্তা বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, দূরবর্তী কোন নক্ষত্রের গামা রশ্মি বিস্ফোরণের বিকিরণ বিশ্লেষণ করে এর সত্যতা একদিন প্রমানিত হবে।

বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে সমন্বিত করে, থিওরি অফ এভরিথিং এর একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু থিওরি অফ এভরিথিং এখনো রয়েছে মানুষের অধরা। মানুষের পক্ষে প্রকৃতির সমস্ত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব কিনা সেটাও অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়।  বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বলেছিলেন, ‘মানুষের পক্ষে প্রকৃতির সমস্ত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব নয়। কারণ সর্বশেষ বিশ্লেষণে দেখা যাবে, মানুষ যে রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছে, মানুষ সেই রহস্যেরই অংশ’। কিন্তু বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নেই। মানুষের জানার চেষ্টারও কোন শেষ নেই। প্রকৃতির রহস্য ভেদে মানুষের পথ চলা তাই অবিরাম।


Comments