ফিরে দেখা: ধূমকেতু

ইদানিং ফেইসবুক খুললেই একটি ধূমকেতুর ছবি দেখছি। ধূমকেতুটি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ আগে দেখা যাচ্ছে। এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন ধূমকেতু।  নাসার স্পেস টেলিস্কোপ Near Earth Object Widefield Infrared Survey Explorer (NEOWISE) এর সাহায্যে এটি আবিষ্কৃত হয়েছে, এজন্য ধূমকেতুটির নামও দেওয়া হয়েছে, "নিও ওয়াইজ"। তবে টেকনিক্যালি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একে C/2020 F3 (NEOWISE) নামে ক্যাটালগ ভুক্ত করেছেন। এটি আবিষ্কৃত হয়েছে এবছরের ২৭ মার্চ। 

গত সপ্তাহে ধূমকেতুটি সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো। এখন ফিরতি পথে চলে যাচ্ছে সূর্য থেকে দূরে। ধূমকেতুটি এ সপ্তাহে পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থান করবে এবং সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ আগে খালি চোখে দেখা যাবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে আগামীকাল ভোর ছয়টার দিকে অস্ট্রেলিয়ার আকাশে এই ধূমকেতুটি দেখা যাবে। বাংলাদেশ থেকেও সূর্যোদয়ের ঘন্টাখানেক আগে একে দেখতে পাওয়ার কথা। 

ধূমকেতু হলো বরফ, ধূলিকণা ও ঘনীভূত গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। এরা সাইজে খুব বড় নয়। প্রস্থে কয়েক শ মিটার থেকে দশ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তাই খালি চোখে এদের দেখতে পাবার কথা নয়। সাধারণত উপবৃত্তাকার কক্ষপথে এরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এদের আবর্তন কাল কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে। 

মজার ব্যাপার হলো, ধূমকেতু যখন সূর্যের খুব কাছে চলে আসে তখন সৌর বায়ু ও বিকিরণের প্রভাবে এর পেছনে একটি দৃশ্যমান গ্যাসীয় লেজ দেখা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে ধূমকেতুর এই লেজটি কয়েকশো কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তখন ধূমকেতুটি খালি চোখে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। কিন্তু ধূমকেতু যতই সূর্য থেকে দূরে সরে যেতে থাকে এর দৃশ্যমান লেজটি ও আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যায়। তখন ধূমকেতুটিকে খালি চোখে আর দেখা যায় না। 

ধূমকেতু জগতের সবচেয়ে বিখ্যাত সদস্যের নাম হলো "হ্যালিস কমেট"। নিউটনের গতিবিদ্যার সূত্র ব্যবহার করে ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি এই ধূমকেতুটির ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি হিসেব করে বের করেছিলেন ৭৬ বছর পর পর এই ধূমকেতুটি ফিরে আসে। "হ্যালিস কমেট"কে শেষ বার দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তবে মনে আছে, সে বছর "হ্যালিস কমেটের" লেজটি ভালোভাবে দৃশ্যমান হয়নি। সেজন্য অনেকেই মনে দুঃখ পেয়েছিলেন। 

কিন্তু আমি আমার খুব ছোটবেলায় ঢাকার আকাশে একটি উজ্জ্বল ধূমকেতু দেখেছিলাম। এটি ছিল ১৯৬৫ সালের কথা। আমার বয়স তখন মাত্র ৫ বছর। সে বছর মহাকাশে একটি বিশাল ধূমকেতু দেখা গিয়েছিলো। যার নাম ছিল "ইকেয়া- সেকি" ধূমকেতু। দুজন জাপানি সৌখিন জ্যোতির্বিদের নামে ধূমকেতুটির নামকরণ করা হয়েছিলো। তাঁরা দুজনেই প্রথমে এই ধূমকেতুটি আবিষ্কার করেন।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, এই ধূমকেতুটির লেজ এত লম্বা ছিলো, যে দেখে মনে হতো আকাশে আড়াআড়িভাবে একটা ঝাঁটার মত বস্তু উল্টো হয়ে ঝুলে আছে। আমার বাল্য স্মৃতিতে এই ধূমকেতুর দৃশ্যটি এখনো অম্লান হয়ে আছে। আজ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা খুঁজে "ইকেয়া-সেকি" ধূমকেতুর একটি ছবি পেলাম। সেই সাথে বর্তমানের, "নিও ওয়াইজ" ধূমকেতুর একটি ছবি দিলাম। কাল খুব ভোর রাত্রে উঠে ধূমকেতুটি দেখতে ভুলবেন না।

Comments