কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের ভবিষ্যৎ

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তাঁর শেষ জীবনে এসে "Brief answers to the big questions" নামে একটি বই লিখেছিলেন।  এটি ছিলো তাঁর লেখা শেষ প্রকাশিত বই। এই বইটিতে দশটি অধ্যায় রয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়েই তিনি বিশ্ব-প্রকৃতি অথবা সমকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে একটি করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছেন। সে সব প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়েছেন তাঁর স্বভাব সুলভ প্রাঞ্জল ভাষায়। এ বইটি তাঁর আগের লেখা, A brief history of time এর মতো বিপুল জনপ্রিয়তা না পেলেও, বইটিতে চিন্তার উদ্রেক করার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। 

বইটির একটি অধ্যায়ে তিনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বুদ্ধিমত্তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন কম্পিউটারই হয়ে উঠতে পারে মানুষের প্রতিদ্বন্দী। সেজন্য তিনি মনে করেন, এ ব্যাপারে আগে ভাগেই সাবধানতা অবলম্বন করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া দরকার। 

মানুষের তৈরি মেশিন মানুষকেই ছাড়িয়ে যাবে, একে অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য কল্পকাহিনী মনে হতে পারে। এ নিয়ে  প্রচুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে অনেক ছায়াছবি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, ব্যাপারটিকে কল্পকাহিনীতে সীমাবদ্ধ না রেখে একে বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করাটি অতি জরুরী। এ জন্য প্রথমে জানা দরকার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাপারটি আসলে কি এবং বর্তমান যুগের প্রযুক্তিতে এর অবস্থান কোথায়। এটি জানা থাকলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য ভবিষ্যতে কি বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে সেটি বোঝা সহজ হবে।  

এক কথায় বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটারকে মানুষের মত করে চিন্তা ভাবনা করে কাজ করতে শেখানো। এটি শেখানো গেলে, মানুষের মস্তিষ্ক যেসব জ্ঞানভিত্তিক (cognitive) কাজগুলো করতে পারে কম্পিউটারও তখন নিজ থেকেই সেই কাজগুলো করতে পারবে। তবে পার্থক্য হলো কম্পিউটার এটি করবে মানুষের চেয়ে বহুগুণ দ্রুত গতিতে এবং নির্ভুলভাবে। 

আমরা জানি, মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটারের অনেক মিল রয়েছে। কম্পিউটারের মতোই মানুষের মস্তিষ্কে রয়েছে মেমোরি সেল বা স্মৃতিকোষ। এগুলো হলো মস্তিষ্কের তথ্য ভান্ডার। মানুষ প্রতিনিয়ত তার ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বহির্জগৎ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মস্তিষ্কের স্মৃতিকোষে জমা রাখে। অসংখ্য নিউরন কোষের নেটওয়ার্কের  মাধ্যমে  মস্তিষ্ক এসব তথ্যকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখে। নিউরনের নেটওয়ার্ক হলো মস্তিষ্কের ডেটা প্রসেসর।  এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে মানুষের মস্তিষ্ক বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনা করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মানুষের মস্তিষ্ক নিজ থেকেই অনেক নতুন জিনিস শিখতে পারে। অতীতের লব্ধ জ্ঞানকে ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে। মানুষের মস্তিষ্কের উদ্ভাবনী ক্ষমতা রয়েছে। সেজন্য গন্ডির বাইরেও মানুষ চিন্তা করতে পারে। এখানেই সাধারণ কম্পিউটারের সাথে মানুষের মস্তিষ্কের গুণগত পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত কম্পিউটার তার প্রোগ্রামের  বাইরে কোন কাজ করতে পারে না। কম্পিউটারকে যেভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে সেভাবেই সে কাজ করবে, এর বাইরে কিছু নয়। তবে কম্পিউটার তার কাজটি করে মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে। 

কিন্তু কম্পিউটারের গতির পাশাপাশি যদি তার মধ্যে  মানুষের মস্তিষ্কের মত কিছু জ্ঞান-ভিত্তিক এলগোরিদম বা গাণিতিক পরিভাষা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে? বোঝাই যাচ্ছে, তখন কম্পিউটার কাজ করবে অনেকটাই মানুষের মস্তিষ্কের মতো। যে সব কাজ মানুষকে বুদ্ধি খাটিয়ে করতে হয়, সেটাই কম্পিউটার তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিমিষের মধ্যে নির্ভুলভাবে করে দেবে। এটাই হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মোদ্দাকথা। 

কম্পিউটার প্রকৌশল ও প্রযুক্তির একটি বিশেষ শাখা হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গত কয়েক দশক ধরে সারা পৃথিবীতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জোর গবেষণা চলছে। বিশেষত অ্যামাজন, এ্যপল, মাইক্রোসফট, আইবিএম, গুগোল, ফেইসবুক সহ বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো এই গবেষণায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। এ নিয়ে বড় বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে  চলছে জোর প্রতিযোগিতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিত্য নতুন পেটেন্ট অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ছে। এ ব্যাপারে কেউ পিছিয়ে পড়তে রাজি নয়। বোঝাই যাচ্ছে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব হবে অপরিসীম। 

বর্তমান যুগেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। আপনার হাতের স্মার্টফোনের কথাই ধরুন। আপনার মুখ দেখেই স্মার্টফোন আপনাকে চিনতে পারে। আইফোনে রয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার "সিরি" অথবা এন্ড্রয়েড ফোনে রয়েছে "গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট"। এদেরকে আপনি যাবতীয় প্রশ্ন করতে পারেন। ওরা আপনার কথা শুনে আপনাকে সম্ভাব্য উত্তরগুলো জানিয়ে দেবে। চাইলে ওদের সাথে আপনি গালগল্পও করতে পারেন।  তারপর ধরুন, গুগলের জিবোর্ড দিয়ে আপনি কথা বলে লিখতে পারেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই লেখাটি এখন আমি জিবোর্ডে ভয়েস কমান্ড দিয়েই লিখছি। তরতর করে লেখা হচ্ছে, কোন ভুল হচ্ছে না। এ ছাড়া রয়েছে মেশিন ট্রানসলেশন। কম্পিউটার আপনার লেখাকে বিভিন্ন ভাষায় নিমেষের মধ্যেই অনুবাদ করে দিবে। আগের চেয়ে মেশিন অনুবাদের মান এখন অনেক ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে আশাকরি আরো ভালো হবে। এ সবই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কেরামতি। কিন্তু এ গুলো হলো, টিপ অফ দি আইসবার্গ। এর বাইরেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের দৈনন্দিন এবং সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের সুদুর প্রসারী সম্ভাবনা রয়েছে। 

চিকিৎসা শাস্ত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বেশ দ্রুত মানুষের রোগ নির্ণয় করা যায়। এক্স- রে  অথবা অন্য কোন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ফলাফল দেখে কম্পিউটারের পক্ষে মানুষের  রোগ নির্ণয় করা অসম্ভব কিছু নয়। এজন্য অবশ্য ক্লিনিক্যাল কম্পিউটারকে আগেভাগেই রোগের লক্ষণগুলো শিখিয়ে দিতে হয়। ডেটাবেজে রক্ষিত মেডিক্যাল রেকর্ডের সাথে রোগের লক্ষণগুলো তুলনা করে কম্পিউটারের পক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে রোগের কারণগুলো খুব সহজেই বোঝা সম্ভব। এছাড়াও, ডিএনএ ডাটাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিশ্লেষণ করে জেনেটিক রোগের কারণ উদঘাটন করাও সম্ভব হবে। জটিল অপারেশনে সার্জনকে সহায়তা করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট। এভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করে চিকিৎসা শাস্ত্রে অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে যেতে পারে। 

ইদানিংকালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে চালক বিহীন গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এসব পরীক্ষামূলক গাড়িতে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ড্রাইভার। ক্যামেরা এবং সেন্সরের সাহায্যে সে তার আশেপাশের যানবাহন ও পথচারীদের অবস্থান সুনির্দিষ্ট ভাবে বুঝতে পারে। সেটাকে বিবেচনায় রেখেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন  ড্রাইভার গাড়ি চালাতে পারে। পৃথিবীর অনেক শহরেই এখন চালকবিহীন গাড়ির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। অদূর ভবিষ্যতে এসব চালকবিহীন গাড়ি বাজারে এসে যাবে। ট্যাক্সি বা উবার চালানোর জন্য তখন আর মানুষের প্রয়োজন হবে না।  এ ছাড়াও, মনুষ্যচালিত গাড়িতে ড্রাইভারের জন্য থাকছে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যেমন আচমকা দুর্ঘটনায় পড়লে গাড়ি নিজ থেকেই ব্রেক কষে দেবে অথবা ড্রাইভার ঘুমিয়ে পড়লে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাকে সতর্ক করে দেবে। ট্রেন, বাস, প্লেন সবই চালানো যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোরে। বলাই বাহুল্য, এর ফলে পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের  সূচনা হবে। 

ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিজ্ঞাপন আসছে। যে যেটা কিনতে চায় তার কাছে সেটারই বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। একে বলে টার্গেটেড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেই এটা সম্ভব হয়েছে। অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে  অ্যামাজন বেশ কিছু গ্রোসারি দোকান খুলেছে যেগুলো  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এসব দোকানে বাজার করতে হলে একটি অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হয়। তারপর দোকানে ঢুকে ইচ্ছেমতো জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসলেই হবে। দোকানে কোন চেক-আউট কাউন্টার নেই। দোকানের ক্যামেরা এবং সেন্সর ক্রেতার প্রতিটি ক্রয় মনে রাখছে। তারপর সেই অনুযায়ী ক্রেতার ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ড থেকে দ্রব্যমূল্য কেটে রাখা হচ্ছে। একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট কেনাকাটা। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ এবং শেয়ার মার্কেটের ওঠানামা এসব মনিটর করার জন্যও  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও আজকাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শরণাপন্ন হওয়া যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি দিয়ে কোন জটিল প্যাটার্ন বা বিন্যাসকে খুব সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। যেসব প্যাটার্ন বুঝতে মানুষের অনেক সময় লেগে যায় সেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কম্পিউটার নিমিষেই বুঝতে পারে। 

শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত চর্চা, ছবি আঁকা সহ যে কোন সুকুমার বৃত্তিতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা যায়। দাবা খেলায়ও এর জুড়ি নেই। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দাবা খেলার নিয়ম কানুন শিখে নিয়ে  চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ুকে অনায়াসে হারিয়ে দিতে পারে। বিজ্ঞানের কঠিন সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। এক কথায় বলা যায়, মানুষের এমন কোন কাজ নেই যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা যাবে না। এর কারণ হলো, মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনের নেটওয়ার্কের অনুকরণেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে।এক্ষেত্রে প্রতি বছরই নতুন নতুন  উদ্ভাবন হচ্ছে। প্রতি বছরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে।

প্রসঙ্গত একটি কথা বলা দরকার, সেটা হলো কম্পিউটারের অগ্রগতির ক্ষেত্রে মুর'স ল (Moore's law) বলে একটা ব্যাপার আছে। মুর'স ল অনুযায়ী কম্পিউটারের অগ্রগতি হয় জ্যামিতিক হারে। প্রতি আঠারো মাসে কম্পিউটারের প্রসেসিং স্পিড দ্বিগুণ হয়ে যায়। এভাবে কম্পিউটারের সাথে সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি হতে থাকলে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি সহজেই অনুমেয়। মোটামুটি ভাবে বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মানুষের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে।  

আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, অষ্টাদশ-উনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের সময়  কর্মসংস্থানের জন্য মানুষকে যন্ত্রের সাথে পাল্লা দিতে হয়েছিলো। কিন্তু সেই সময় পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। শিল্প বিপ্লবের ফলে নুতন নুতন শিল্পকারখানা স্থাপিত হয়েছিলো। তার ফলে মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হয়েছিলো। শিল্প বিপ্লবের সময় মানুষ কর্মহীন হয়নি, বরং তার জীবনের মান উন্নত হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে যোগ হয়েছে রোবটিক্স। মানুষের দৈহিক এবং মানসিক সব ধরনের কাজই করতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে অনেক শিল্প-কারখানায় কাজ করার জন্য মানুষের প্রয়োজন হবে না। চাকরি হারাবে কোটি কোটি শিল্প শ্রমিক। শুধু তাই নয়, এর ফলে  চিকিৎসক, প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন দক্ষ পেশার লক্ষ লক্ষ মানুষও তাঁদের কাজ হারাবেন। অনেকের মতে, আর মাত্র দুই দশকের মধ্যেই পৃথিবীর দুই বিলিয়ন মানুষ কর্মক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বেন।   ভয়াবহ বেকারত্ব দেখা দিবে সারা পৃথিবীতে। তখন সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এর মারাত্মক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। 

প্রফেসর হকিং অবশ্য আরেকটি মারাত্মক বিপদের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক সময় এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন এটি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।  এটি আগামী শতাব্দীর মধ্যেই ঘটতে পারে।  একে বলে, টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটি। ‌ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তখন নিজে নিজেই আরও উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সৃষ্টি করবে। এটি হবে মানব সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি। অতএব সাধু সাবধান। প্রফেসর হকিং বলেছেন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন কারণে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার এবং ব্যবহার। তিনি মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত উন্নয়নের ফলে ভবিষ্যতের মানব সমাজের উপর এর কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে এখনই  জোর গবেষণা হওয়া উচিত। এ সব গবেষণার উপর ভিত্তি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য  আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আগুন জ্বালানোর পাশাপাশি আগুন নেভানোর ব্যবস্থাটিও যেন মানুষের হাতেই থাকে। তা না হলে মহাবিপদের আশঙ্কা রয়েছে। 

কপিরাইট: তানভীর হোসেন।

Comments