সিলেটের বিখ্যাত নাগা মরিচের নাম আমরা কমবেশি সবাই জানি। নাগা মরিচের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটা প্রচন্ড রকমের ঝাল। শুধু প্রচন্ড ঝাল বললে ভুল হবে, এটা ভয়াবহ রকমের ঝাল মরিচ।
মরিচের ঝালের পরিমানের কম বেশি হয় ক্যাপসাইসিন (Capsaicin) নামের এক রাসায়নিক উপাদানের কারণে। যে মরিচের ক্যাপসাইসিনের পরিমান বেশি তার ঝালের পরিমাণও তত বেশি। এই ঝালের পরিমাপের একক হলো SHU বা Scoville Heat Units - এটা মাপার এক বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে।
আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়াতে গ্রোসারি দোকানে সাধারণত যেসব
ঝাল মরিচ পাওয়া যায় সেগুলোর SHU হলো দশহাজার থেকে বিশহাজারের মধ্যে। যেমন "হ্যালোপিনো" মরিচ। এগুলো সাধারণ ঝাল মরিচ। কিন্তু যেসব মরিচের SHU পঞ্চাশ হাজার থেকে একলক্ষের মধ্যে সেগুলোকে খুবই ঝাল মরিচ হিসাবে ধরা হয়। আর একলক্ষের উপরে SHU যেসব মরিচের সেগুলো হলো প্রচন্ড ঝাল মরিচ। আর পাঁচ লক্ষ SHU ছাড়ালে তো কথাই নাই। সেগুলো হলো মারাত্মক রকমের ঝাল মরিচ। সেখানে নাগা মরিচের SHU হলো দশ লক্ষের মত। সুতরাং বুঝুন এর ঝালের পরিমান। একেবারে ভয়াবহ রকমের ঝাল। সাধারণ ঝাল মরিচের চেয়ে একশোগুন বেশি ঝাল এই নাগা মরিচ। যে একবার খেয়েছে সে এটা সারাজীবন মনে রাখবে।
নাগামরিচ বাংলাদেশের এক
অমূল্য সম্পদ। সিলেটের মানুষেরা নাগা মরিচ খুবই ভালোবাসেন। শুধু ঝাল নয়, এর খুব সুন্দর ফ্লেভার ও রয়েছে। সিলেটের মানুষের কাছে নাগা মরিচ তাই অতি প্রিয়। লন্ডন প্রবাসী সিলেটি মানুষের কল্যাণে নাগা মরিচের নাম প্রথমে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে সারা বিশ্বে।
নাগা মরিচের মতো আরেকটি মরিচ আছে যার নাম "ভুত জালোকিয়া"। এটা ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে পাওয়া যায়। এর ঝালের পরিমাণ নাগা মরিচের কাছাকাছি। দেখতেও কিছুটা নাগা মরিচের মতো। তাই ধারণা করা হয় এটা নাগামরিচেরই আরেকটি জ্ঞাতি ভ্যারাইটি।
ইদানিং সিলেকটিভ ব্রিডিং এর
মাধ্যমে নাগা মরিচের চেয়েও ঝাল একটি মরিচের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে আমেরিকাতে। এই জাতটির নাম "ক্যারোলাইনা রিপার"। আমেরিকার একজন ব্রিডার "ভুত জালোকিয়া" এর সাথে "রেড হাভানিরো" মরিচের ক্রসিং করে "ক্যারোলাইনা রিপার" নামের এই নুতন জাতটি ২০১৩ সালে বাজারে ছেড়েছেন। এর সর্বোচ্চ ঝালের রেকর্ড অবিশ্বাস্য হলেও সত্য - বাইশ লক্ষ SHU। বর্তমান বিশ্বে এটাই সবচেয়ে ঝাল মরিচ।
Comments