প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই কালপুরুষ মানুষের কাছে এক অতি পরিচিত নক্ষত্র মন্ডল । ইংরেজিতে এর নাম হলো ওরায়েণ (Orion)। একই সরল রেখায় তিনটি তারার অবস্থান দিয়ে কালপুরুষকে খুব সহজেই চেনা যায়। এই তিনটি তারাকে মনে করা হয় কালপুরুষের বেল্ট। প্রাচীন গ্রিক পুরাণে কালপুরুষকে কল্পনা করা হয়েছে শিকারির বেশে। যার একহাতে তীর, অন্য হাতে ধনুক, কোমরের বেল্টে ঝুলছে তলোয়ার। মহাকাশে কালপুরুষ যেন এক সাহসী পুরুষ।
কালপুরুষ নক্ষত্র মন্ডলে রয়েছে একটি উজ্জ্বল রক্তিম তারা, যার নাম হলো বেটেলজিউস (Betelgeuse)। বাংলায় একে বলে আদ্রা নক্ষত্র। কালপুরুষের কাঁধের কাছে এর অবস্থান। খালি চোখে এই নক্ষত্রটি খুব ভালোভাবেই দেখা যায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে এটি যে একটি লালচে রঙের তারা সেটাও বোঝা যায়। আমি নিজেও এই তারাটির ছবি অনেকবার তুলেছি।
গত কয়েক বছর ধরেই বেটেলজিউসকে ঘিরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তার কারণ হলো এই তারাটি ধীরে ধীরে তার ঔজ্জ্বল্য হারাচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি আরো বেড়ে গেছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে মনে হচ্ছে নক্ষত্রটি দ্রুত তার ভর হারাচ্ছে। এটি হলো সুপারনোভা বিস্ফোরণের পূর্বাবস্থা।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে এই তারাটির সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যদি সেটা আমাদের জীবদ্দশায় হয় তবে আমরা এক আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকবো। তখন দেখা যাবে হঠাৎ করেই নক্ষত্রটি অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। অনেক মনে করছেন এটি বিস্ফোরিত হলে কিছুদিনের জন্য চাঁদের মত উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে রাতের আকাশে। তখন দিনের বেলায়ও এই তারাটি দেখা যাবে। তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে মহাকাশে।
এরকম একটি সুপারনোভার বিস্ফোরণ হয়েছিল ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে। সে সময় চীন দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেটা লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তখন একটি তারা এত উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল যে দিনের বেলায়ও সেটি দেখা যেত। বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা মনে করেন কর্কট নেবুলার জন্ম হয়েছিল সেই সুপার নোভাটি থেকেই।
বেটেলজিউসের বিস্ফোরণ কবে হবে সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। সেটা আগামী কালও হতে পারে, আবার কয়েক হাজার বছর পরেও হতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আপাতত বেটেলজিউসকে কড়া নজরদারিতে রাখছেন। এর ভেতর পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করছেন। এটি বিস্ফোরিত হলে এর কোন ক্ষতিকর প্রভাব পৃথিবীতে পড়বে না সেটা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন। তবে মানবজাতির জন্য সেটি হবে একটি অনন্য সাধারণ মহাজাগতিক দৃশ্য। কিন্তু কালপুরুষের সুপারনোভা দেখার জন্য হয়তো আরো কয়েক হাজার বছরও আমাদের অপেক্ষা করতে হতে পারে।
Comments