এক শতাব্দীর ব্যবধানে

১৯১৯ সালে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল থেকে একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। সেই সূর্যগ্রহণের সময় নক্ষত্রের আলো পরীক্ষা করে প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্যার আর্থার এডিংটন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন। আইনস্টাইনই প্রথম বলেছিলেন আলোর উপর মহাকর্ষের প্রভাব রয়েছে।  এর ফলে আলোকরশ্মির গতিপথ বাঁকা হয়ে যেতে পারে।  

বিজ্ঞানীরা এখন জানেন, এমন অনেক মহাজাগতিক বস্তু রয়েছে যাদের মহাকর্ষ বলের প্রভাব এতই বেশি যে সেগুলো থেকে কখনও কোন আলোকরশ্মিই বের হতে পারে না। শুধু আলোকরশ্মিই নয়, তাদের প্রবল মহাকর্ষ গ্রাস করে নেয় আশেপাশের সব কিছুকে। এসব মহাজাগতিক বস্তুর নাম হলো ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ বিবর। ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে যা একবার অতিক্রম করলে সেখান থেকে ফেরার আর কোনো উপায় থাকে না। এই সীমার ভিতরে যেকোনো বস্তুকেই ব্ল্যাকহোল গ্রাস করে নেয়। এই সীমারেখাটার নাম হল ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা-দিগন্ত।

আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রমানিত হওয়ার ঠিক এক শতাব্দী পর, ২০১৯ সালে এসে বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা এবার একটি ব্ল্যাকহোলের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সেই ছবিটি তাঁরা প্রকাশ করেছেন। এখন প্রশ্ন হলো ব্ল্যাকহোল থেকে যদি কোন আলোই বের হতে না পারে, তবে তার ছবি কিভাবে তোলা সম্ভব হলো।

এটা সম্ভব হয়েছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের মাধ্যমে। সারা পৃথিবী জুড়ে আটটি ইভেন্ট হরাইজন রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে দূরবর্তী একটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে এই বিশাল আকৃতির ব্ল্যাকহোলটির সন্ধান পাওয়া গেছে। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে যে ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ অন্ধকার, কিন্তু তার প্রবল মহাকর্ষের প্রভাবে ইভেন্ট হরাইজনের বাইরের আলো বেঁকে যাচ্ছে তার দিকে। একশ বছরের ব্যবধানে আবারও প্রমাণিত হলো মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের তত্ত্ব। জয় হোক বিজ্ঞানের।

Comments