একটি সাদাকালো গল্প

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের চলতি সংখ্যার (এপ্রিল ২০১৮) প্রচ্ছদে দুটি মেয়ের ছবি ছাপা হয়েছে। ওদের একজনের নাম মিলি আর অন্যজনের নাম মার্সিয়া। মিলি হলো কৃষ্ণাঙ্গ আর মার্সিয়া শেতাঙ্গ। মজার ব্যাপার হলো ওরা দুজন আপন বোন। শুধু আপন বোনই নয় ওরা দুজন যমজ বোন।

ওদের বাবা কৃষ্ণাঙ্গ আর মা শেতাঙ্গ। আর ওরা হলো নন আইডেন্টিকাল টুইন। তারমানে যমজ হলেও ওদের জন্ম হয়েছে মায়ের গর্ভে দুইটি ভিন্ন ডিম্বাণু থেকে। বাবার শুক্রাণু দুইটি ডিম্বাণুকে পৃথক পৃথক ভাবে নিষিক্ত করেছিল। যার একটি থেকে জন্ম নিয়েছে মিলি আর অন্যটি থেকে জন্ম নিয়েছে মার্সিয়া। আর জেনেটিক কারণে ওদের একজন পেয়েছে বাবার ত্বকের বৈশিষ্ট্য আর অন্যজন পেয়েছে মার  ত্বকের বৈশিষ্ট্য। এরকম সাদা কালো যমজ বাচ্চা খুব একটা দেখা যায়না।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন মানুষের গায়ের রঙের জন্য মাত্র কয়েকটি জিন দায়ী। এই জিনগুলি মানুষের ত্বকের মেলানিন নামের  প্রোটিনের পরিমান নির্ধারণ করে। মানুষের ত্বকে মেলানিনের আধিক্য থাকলে ত্বকের রং হয় কালো, আর কম থাকলে হয় সাদা। কিন্তু কালো আর সাদার মাঝামাঝি আরো অনেকের বর্ণের মানুষ রয়েছে, যেমন পীত, বাদামী ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা ফসিল রেকর্ড থেকে দেখেছেন, তিন লক্ষ বছর আগে আদি মানবের উদ্ভব হয়েছিল আফ্রিকাতে।  তখন সব মানুষই ছিলো কৃষ্ণবর্ণ। তারপর এই আদি মানবদের একদল আফ্রিকা থেকে  বেরিয়ে এসে ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার বছরের পরিক্রমায় মিউটেশনের ফলে
মানুষের ত্বকের জিনের পরিবর্তন হয় এবং
বিভিন্ন বর্ণের মানুষের উদ্ভব ঘটে। তবে মানব জিনোমের বিশালত্বের কাছে এই জেনেটিক পরিবর্তনটি অতি তুচ্ছ ও নগন্য।

অথচ এই অতি সামান্য জেনেটিক
পরিবর্তনটি মানবসমাজে বর্ণবাদের মতো ভয়াবহ প্রথার জন্ম দিয়েছে যার কুপ্রভাব থেকে মানুষ এখনো মুক্ত হতে পারেনি।  পৃথিবীর অনেক সমাজে এখনো বর্ণবাদ প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে বিরাজমান।  এখনো অনেক সমাজে সাদাকে কালোর চেয়ে উন্নত মনে করা হয়। কালো মানুষকে বঞ্চিত করে রাখা হয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে। মানুষ প্রায়শই ভুলে যায় যে কালো আর সাদা শুধুই বাহ্যিক আবরণ মাত্র, সকল বর্ণের মানুষই  আসলে সমান, একই ধরিত্রীর সন্তান‌ । মিলি আর মার্সিয়া দুই যমজ বোন তারই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

Comments